জানো তুমি কত শত অভিমান তোমার ওপর জমে আছে আমার? কেন পারলে না আমার সাথে আরও কয়েকটা বছর থেকে যেতে? আমি প্রশ্নবাণে তোমাকে জর্জরিত করবই। তুমি আমায় জবাব দিয়ে যেও।
আমি তখন কেবল চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। তখনই আমাকে বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত করে না ফেরার দেশে চলে গেলে। তেমন কোনো স্মৃতি আমি মনে করতে পারি না। মনে হবেই কীভাবে, যখন স্মৃতি তৈরির বয়স হলো তখনই তো হারিয়ে গেলে। শৈশবের যে স্মৃতিগুলো স্পষ্ট মনে পড়ে সেটা তো ওই সময়টাই। কিন্তু আঁধারে ঢেকে আছে সব।
সামান্য কিছু স্মৃতিকে পুঁজি করেই বেঁচে আছি এখন। কত শত বার যে এগুলো মনে হয়, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। গভীর রাতে তোমাকে স্বপ্ন দেখে এখনো কেঁদে উঠি।
বাবা জানো? তোমার শূন্যতা কাউকেই বলতে পারি না। শুধু লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদি আর তোমার ওপর অভিমান বাড়াই।
তোমার বন্ধু, সহকর্মীরা যখন তোমার কথা বলে, স্মৃতিচারণ করে তখন কী যে ভালো লাগে। আফসোস হয় তোমাকে তারা যতটুকু দেখেছে আমি ততটুকু দেখতে পারলাম না। হঠাৎ করেই বুকটা খাঁ খাঁ করে উঠে। সবার সামনে খুব কষ্টে আবেগ চেপে রাখি। কিন্তু বাবা আমি কান্না আটকাতে পারি না।
বন্ধুরা যখন বাবার সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যায়, ফেইসবুকে ছবি আপলোড দেয় আমি শুধু চেয়ে দেখি। বোঝার চেষ্টা করি তুমি থাকলে হয়ত আমিও এমন করতাম।
একদিন শিক্ষক ক্লাসে বলছিলেন, তোমরা সবাই বাবাকে নিয়মিত কল দাও তো? বাবার সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করো তো? আমি শুনে চুপ হয়ে গিয়েছিলাম। আমি তো তোমাকে কখনো কল দেইনি। ফোন কেনার বয়সটা পর্যন্ত কেন অপেক্ষা করলে না?
বাবা আমি স্বপ্ন দেখতে ভয় পাই। বাবারা নাকি স্বপ্নের সারথি হয়, সাহস দেয়। আমি পূরণ করতে না পারলেও বাবা কিছু একটা করে দিবে- আমি এটা কল্পনাতেও আনতে পারি না।
আমার এখন যেটা বেশি মনে পড়ে, তোমার একটা খুব পুরনো সাইকেল ছিল। পেছনে বসে আমি মাঝে মাঝে তোমার সাথে বাজারে যেতাম। পেছন থেকে তোমার পিঠে হেলান দিতাম। আমার সেই আশ্রয়টা এখন নাই।
যেখানেই থাক ভালো থেক বাবা। আমি তোমার অভিমানি ছেলে। তোমাকে দোষ দিয়েই যাব।