অতীতে এদেশে মৃৎশিল্পের বেশ কদর ছিল কিন্তু বর্তমানে তা নেই বললেই চলে। আগে আমাদের ব্যবহার্য বাসনকোসনের বেশিরভাগই ছিল মাটির তৈরি। কুমোর ছিল, ছিল কুমোর পাড়া।
সাধারণত মাটির তৈরি জিনিসপত্রকে মৃৎশিল্প বলে। আর যারা মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, ফুলদানি, টব বানান তাদের কুমোর বলে।
কিন্তু বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ভাটা পড়েছে মৃৎ শিল্পে। এর বদলে জায়গা করে নিয়েছে মেলামাইন, প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসপত্র। তাই মাটির তৈরি তৈজসপত্রের তেমন চাহিদা নেই। চাহিদা না থাকায় অনেক কুমোর এখন পেশা ছাড়ছেন।
আমার নানু বাড়ি পাবনায়। প্রতি বছরই সেখানে যাওয়া হয়। যখন আমার ৭-৮ বছর বয়স তখন নানু বাড়ি গিয়ে কুমার পাড়ায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম কত রকমের মাটির জিনিস বানাচ্ছেন এখানকার মৃৎশিল্পীরা।
মাটি দিয়ে বানানো হচ্ছে হাঁড়ি, ফুলদানি, ট্যাপা পুতুল, টব আরো কত কী! দেখে আমার খুব ভালো লাগল। কিন্তু গত বছর গিয়ে দেখলাম সেখানে আর সেরকম তোরজোর নেই। কুমার পাড়ার প্রবীণ শিল্পী হরিচাঁদ কুমারের সঙ্গে কথা হয়। তার সঙ্গে এ বিষয়টা নিয়ে আলাপ করি কিছুক্ষণ। বোঝার চেষ্টা করেছিলাম তাদের সংকটের গল্প। সেখানে খারাপই লাগছিল আমার।
তিনি বলছিলেন, মাটির জিনিসের সেরকম কদর না থাকায় তারা এখন এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গিয়েছে। তবুও এ পাড়ার এক দুজন পারিবারিক পেশার ধারা নিয়ে এখনো এই পেশাতেই আছেন।
দেখে খুব অবাক হলাম মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে এ গ্রামের মৃৎশিল্পের পতন দেখে। সচেতন মানুষ অতীত ঐতিহ্য ধরে রাখতে নিজেদের বাড়িঘর সাজানোর জন্য মৃৎশিল্পই বেছে নেন। হয়ত সেজন্য কিছুটা চাহিদা এখনো আছে। তবে সেটা খুবই সামান্য।
এই শিল্পের চাহিদা সৃষ্টি করে একে বাঁচানো সম্ভব। নিজেদের ঐতিহ্য অবজ্ঞা করা খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এগুলো আমাদের অহংকার।