ভাবলাম কয়েকটা দিন এখানে থাকব। কিন্তু আমার মামাত ভাই-বোনরা চাচ্ছিল কোথাও বেড়াতে যেতে। তাই মামা আমাদের কক্সবাজার নিয়ে যেতে চাইলেন। আমি বললাম কক্সবাজার নয়, কুয়াকাটায় গেলে ভালো হয়। যেহেতু আগে কখনো যাওয়া হয়নি। সবাই আমার মতকে সর্মথন করল।
পরদিন দুপুরেই আমরা যাত্রা শুরু করি। প্রথমে নরসিংদী থেকে ঢাকার সদরঘাটে পৌঁছালাম। সেখান থেকে বিশাল আকৃতির এক লঞ্চে উঠলাম। লঞ্চ ছাড়ার পর আমি ও আমার ভাই-বোনরা লঞ্চের ছাদে উঠি। উদ্দেশ্য ছিল নদী আর চারপাশের দৃশ্য উপভোগ করা।
বিকেলের সূর্যের আলোয় দুই পাড় খুব ঝলমল করছিল। হঠাৎ লঞ্চটি দুলতে শুরু করায় ভয় পেয়ে নিচে নেমে আসি।
খানিক বাদেই সন্ধ্যা নামল। নদীর উপর রাতের দৃশ্য যেন আরও সুন্দর হয়ে উঠে। চারদিকে ঝিরঝিরে বাতাস বইছে আর আকাশ ভরা তারার ঝিকিমিকি। চাঁদের মিষ্টি আলো ছড়িয়ে পড়েছে ঢেউয়ের মাথায়। অনেক দূরে গ্রামের রেখা চোখে পড়ছিল।
দেখলাম নদীতে ছোট ছোট মাছ ধরার নৌকা ভাসছে। ছোট বড় লঞ্চগুলো দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম সব।
চোখ বুজে আসছিল ঘুমে। এরপর আর কিছু মনে নেই, ঘুম ভাঙল পটুয়াখালী এসে। ততক্ষণে সকাল হয়ে গেছে। এরপর বাসে করে আমরা কুয়াকাটায় পৌঁছাই।
হালকা কুয়াশায় ঢাকা নদী আর গ্রামগুলো তখন সরব হয়ে উঠেছে মাত্র। অল্প কিছু পথ হেঁটে আমরা সমুদ্র সৈকতে পৌঁছাই। যতদূর দৃষ্টি যায় কেবল পানি আর পানি। ভিজে আছে সৈকতের বালি।
কুয়াকাটা সৈকতের মূল আকর্ষণ সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই সৈকতে ভীড় শুরু হলো। খানিক বাদেই দেখলাম বড় থালার মতো লাল টুকটুকে সূর্য ঢলে পড়ছে সমুদ্রে।
দর্শনার্থীদের অনেকের হাতেই তখন ক্যামেরা। ক্লিক ক্লিক ধ্বনি হচ্ছিল আশেপাশে। সবাই ধরে রাখতে চাইছে এই মুহুর্তের ছবিটা। মনে হলো দেখতে দেখতে সূর্যটা টুপ করে ডুবেই গেল।
হোটেলে ফিরে এসে সবাইকে বললাম সকালে আমরা সূর্যোদয় দেখতে যাব। যেই কথা সেই কাজ। সকাল সকাল সৈকতে পৌঁছে গেলাম। কুয়াশায় ছেয়ে আছে সাগর। তবুও পূর্ব দিগন্তে আগুনের শিখা ছড়িয়ে উঠে এলেন সূয্যি মামা।
এরপর লেবু বাগান, ঝাউবাগান ঘুরেছি। সেখান থেকে আমরা রাখাইন পল্লীতে যাই।
এই ভ্রমণের দিনগুলো কেমন টুপ করে শেষ হয়ে গেল। ফেরার সময় একটু মন খারাপও হলো। কিন্তু ফিরতে তো হবেই।