শিক্ষা সফরের উপভোগ্য সেই দিনটি

আমি তখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। যে স্কুলে পড়তাম আম্মু সে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক।
শিক্ষা সফরের উপভোগ্য সেই দিনটি

রোজ আমরা দুই বোন ফেনী থেকে স্কুলে যেতাম আম্মুর কোলে বসে। আমাদের দুই বোনকে আম্মু দু’হাঁটুতে বসিয়ে স্কুলে নিয়ে যেতেন। সেদিনও আমরা আম্মুর সাথে স্কুলে পৌঁছালাম। কিছুক্ষণ পরে হঠাৎই দেখি আম্মু পিয়ন আঙ্কেলকে সঙ্গে নিয়ে একটি ব্যানার ঝুলাচ্নছে। তার কিছুক্ষণ পরই শ্রেণি কক্ষে ঘোষণা আসল আমরা শিক্ষা সফরে যাচ্ছি। স্থান কুমিল্লা কোর্টবাড়ি, ময়নামতি, বার্ড।

সবাই খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম। আমাদের আনন্দ যেন প্রকাশ করার মতো না। প্রতীক্ষার প্রহর গুনছিলাম কবে যাব। অবশেষে এল আমাদের সেই কাঙ্খিত দিনটি।

আম্মু আগের দিন চলে গেলেন স্কুলে। বাজার করা, বাবুর্চি ঠিক করা সবকিছু প্রস্তুত করতে হবে। সারারাত জেগে আম্মু ও তার সহকর্মীরা রান্নায় তদারকি করেন।

এদিকে আমরা আছি ভোরের অপেক্ষায়। ঘুম ভাঙতেই আম্মুর ফোন তোমরা প্রস্তুত হয়ে নাও। আমরা কিছুক্ষণের মধ্যে যাত্রা শুরু করব। তোমাদেরকে ফারুক হোটেলের সামনে থেকে তুলে নেব।

আমরা প্রস্তুত হয়ে হালকা নাস্তা খেয়ে নিলাম। আম্মু বলেছিলেন দূরের ভ্রমণে ভাত খেতে নেই। সঙ্গে পানির বোতলও নিতে বললেন। সব গুছিয়ে আমরা একদম প্রস্তুত হয়ে যাই।

বড় আপু, মেজো আপু আর আমি রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলাম। কান সজাগ সবার, মাইকের শব্দ শোনার জন্য। টান টান উত্তেজনা কাজ করছিল মনে। এমন সময় মাইকে আম্মুর কণ্ঠ ভেসে এল। একে একে তিনটি বড় বাস আমাদের সামনে থামল। সবাইকে উঠতে বলা হলো।

আম্মু মাইকে গেয়ে উঠলেন, গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙামাটির পথ আমার মন ভুলায়রে--------

গাড়ি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটছে। পথে শাওন স্যার, সুলতানা ম্যাম, রিজন ও সিজন স্যার, যুধিষ্ঠির স্যার, মেজো আপু, আমি, বড় আপু এবং আরো অনেকে গান গেয়ে আবৃত্তি করে মাতিয়ে রাখলাম যাত্রাপথ। পথে পাউরুটি, কলা, ডিম দিয়ে আরেক দফা নাস্তা সেরে নিলাম।

আমাদের গাড়ি বার্ডের সামনে থামল। আম্মু স্যারদের প্রত্যেককে দশজন ছাত্রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন। অভিভাবক, পরিচালনা কমিটিকে বললেন খেয়াল রাখতে।

আমরা শাওন স্যারের নেতৃত্বে ঘুরতে শুরু করলাম। পাহাড়ে উঠলাম। সেখানে সুন্দর ফুলের বাগান আমাদের মুগ্ধ করে।

ওখান থেকে বের হয়ে আমরা বৌদ্ধ মন্দির দেখতে গেলাম। সেখানে মুনি ঋষিদের প্রাচীন বৌদ্ধমূর্তি দেখতে পেলাম। বৌদ্ধ মন্দিরের নজরকাড়া কারুকাজ যে কারো মন কেড়ে নেয়।

এরপর আমরা ময়নামতি শালবন বিহার ঘুরতে যাই। সেখানে পোড়ামাটির প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনগুলো ঘুরে ঘুরে দেখলাম। এসব নিদর্শন আমাদের প্রাচীন বাংলার সমৃদ্ধ ইতিহাস মনে করিয়ে দেয়। সবাই মিলে ফাঁকে ফাঁকে ছবিও তুলছিলাম। ময়নামতি শালবন বিহারের সারি সারি ফুল বাগানে মন হারিয়েছিল বার বার।

ঘোরাঘুরি শেষে সবাই মিলে দুপুরের খাবার খেয়ে কেনাকাটা করতে বেড়িয়ে পড়ল। আম্মু আমাদের একতারা, সেতার ও অনেক খেলনা কিনে দিলেন। এ ছাড়া আচার, বাতাসা, হাওয়াইমিঠাই কিনে দিলেন। আমাদের জন্য কিছু জামা কাপড়ও কিনে নিলেন।

আমরা একে একে গাড়ির কাছে ফিরে এলে আম্মু গুনে গুনে গাড়িতে তুলে আবার গাড়ি ছাড়তে বললেন। ফেরার পথে ক্লান্তিতে ঢুলু ঢুলু সবার চোখ। কেউ কেউ ঘুমিয়ে পড়ল। পথে আবার বিকালের নাস্তা পরিবেশন করা হলো। রাত আটটায় আমরা ফেনী এসে পৌঁছালাম। দিনটি খুবই উপভোগ্য ছিল।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com