বাবা মা বন্ধু হোক

মা-বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত বলে আমার কাছে মনে হয়। কিন্তু প্রতিটি সন্তানের সাথে মা-বাবার সম্পর্ক কি বন্ধুর মতো?
বাবা মা বন্ধু হোক

ভয়ে হোক বা যেকারণেই হোক, আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা মনের অজান্তেই মা-বাবার সাথে অযাচিত দূরত্ব তৈরি করে ফেলি। এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে যেগুলো নিয়ে আমরা মা-বাবার সঙ্গে আলোচনাই করি না, উল্টো গোপন করে রাখি।

কেউ কেউ হয়ত না বুঝে অনেক সময় ভুল কাজ করে ফেলি। কিন্তু বাবা মাকে জানাই না। ভয় পাই। মনে হয় তারা জেনে গেলে হয়ত খুব বকাঝকা কিংবা মারধর করবেন। সাতপাঁচ ভেবে গোপন করে ফেলি। বা কোনো বন্ধুকেই বলে ফেলি। কিন্তু এর ফলাফল সব সময় ভালো নাও হতে পারে। কারণ তার মা-বাবা আমাকে যে উপদেশ দেবেন, বন্ধুটি আমাকে তেমন ভালো উপদেশ নাও দিতে পারে। কারণ ও তো ছোট।  

তাই মা বাবার কাছে কিছু না লুকিয়ে রেখে বরং সত্য কথাটা বললেই বরং তারা খুশি হবেন বলে আমি মনে করি। কিন্তু সেটা না করলেই বরং দূরত্ব তৈরি হবে। আর এই দূরত্বের ফলাফল প্রায়শই খুব একটা ভালো হয় না।

কারণ যখন মা বাবা আমাদের ভুল কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানবেন না, আমরা কী করি, কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করি বুঝতে পারবেন না তখন তো আমাদের কেউ সঠিক পথ দেখাতে পারবে না। এর ফলে কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল-সেটা সে বুঝতেও পারব না।

এছাড়া মা-বাবার কাছে কোনো বিষয় গোপন রাখার পর এটা যখন হঠাৎ করে ফাঁস হয়ে যায় তখন আমাদের প্রতি মা-বাবার অনাস্থা তৈরি হতে থাকে এবং তার নিজের মধ্যেও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়। যেটা তার ভবিষ্যতের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

অন্যদিকে মা-বাবাকেও বাচ্চাদের প্রতি অনেক বেশি সহানুভূতিশীল হতে হবে। শুধু নিজেদের নিয়ে কিংবা সন্তানের পড়ালেখা নিয়েই ব্যস্ততা নয়; সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। সন্তানের পরম বন্ধুর মতো সেই আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে হবে যাতে করে সে যাই করুক না কেন আপনাকে যেন সবার আগে বলতে পারে। সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়ার জন্য মা-বাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

আমি এমন অনেক মা-বাবাকে দেখেছি যারা জনসমক্ষে তার সন্তানের গায়ে হাত তোলেন কিংবা খুব খারাপভাবে তিরস্কার করেন। তাদের ধারণা, প্রতিনিয়ত সন্তানকে বকাঝকা কিংবা তার গায়ে হাত তুললে সে আস্তে আস্তে শুধরে যাবে। তারা হয়ত ভাবেন, এটা তাদের ভালোর জন্যই। কিন্তু আসলে এই ধারণা সম্পূর্ণরূপে ভুল। কারণ যখন কারও গায়ে প্রতিনিয়ত হাত তোলা হবে, তখন তার মনের মধ্যে ভয় তৈরি হবে। যখন তাকে তার ছোট ছোট ভুলের জন্যও তিরস্কার করা হবে, তখন তার মনের মধ্যে বড় ধরণের ক্ষত তৈরি হবে। তখন সে পরিবার থেকে দূরে চলে যাবে, বিপথেও যেতে পারে।

এছাড়া যখন সে পরিণত বয়সে পৌঁছাবে, তখন তার মাথায় ছোটবেলার এই খারাপ স্মৃতিগুলোই ঘুরপাক খাবে। তাই মা-বাবারা যদি এই মারধর কিংবা তিরস্কার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলেন এবং সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলেন তাহলে এ ধরণের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

তাছাড়া আমাদের আজকের নগর জীবনে বন্ধু সান্নিধ্য অনেকটা জটিল হয়ে পড়েছে। সমাজের চারপাশে যে অস্থিরতা চলছে সেই অস্থিরতা থেকে সন্তানকে বাঁচাতে হলেও মা-বাবাকেই শ্রেষ্ঠ বন্ধু হিসেবে আবির্ভুত হতে হবে। মা-বাবা আর সন্তানের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। কিন্তু এটা যেন সামান্য কিছু ভুলের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটা খেয়াল রাখার দায়িত্ব মা-বাবা ও আমাদের প্রত্যেকটি সন্তানের।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com