পেশা নির্বাচনে স্বাধীনতা দরকার

আমাদের দেশে পেশা নির্বাচনে একটা ভিন্ন ধারার প্রবণতা আছে। শৈশবেই দুটি বিকল্প সামনে তুলে ধরা হয় চিকিৎসক হবে নাকি প্রকৌশলী? যুগ যুগ ধরে এটাই হয়ে আসছে। এর অন্যথা নেই।
পেশা নির্বাচনে স্বাধীনতা দরকার

অনেক সময় এটাও বলা হয় মেয়েরা চিকিৎসক হওয়া উচিত আর ছেলেরা প্রকৌশলী। লিঙ্গ ভেদে ভাগ করে ফেলা হয় পেশাও। এরকম নানা উদ্ভট চিন্তা শিশুকালেই আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।তখন এগুলো লালন করা ছাড়া শিশুমনের আর কিছু করার থাকে না।

নবম শ্রেণিতে উঠার সময় শুনতে হয় বিজ্ঞান শাখায় পড়তে হবে, কারণ এটি নাকি মেধাবীদের জন্য নির্ধারিত। ব্যবসা আর মানবিকে পড়ে মেধায় দুর্বল যারা। আমি নিজে এর কোনো কূল কিনারা পাইনি, এ কথা কোন যুক্তিতে বলে।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য বলির পাঠা হয় সন্তানরা। বাবা-মায়েরা আমাদের কাছে আশা করতেই পারেন। যেহেতু তারা আমাদের জন্য মঙ্গলই কামনা করেন। কিন্তু আমাদের ইচ্ছা, মতামতকেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত এটা তারা কখনো ভেবেই দেখেন না।

এমন অভিভাবক খুব কমই আছে যারা সন্তানকে তার ভালো লাগা, মন্দ লাগা নিয়ে জিজ্ঞেস করে। সে কোন বিষয়টাতে পড়তে পছন্দ করবে, বড় হয়ে কী হবে-সব। কিন্তু এমন বাবা মায়ের সংখ্যা তো হাতেগোনা।

বাবা মা এভাবে বন্ধু হয়ে কথা বললে আলোচনা করে অনেক ভালো কিছু অর্জন করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।

আমাদের দেশে সাধারণত যে ধরনের পেশার অর্থনৈতিক সম্মান, জনপ্রিয়তা ইত্যাদি বেশি সে ধরনের পেশাকেই দেখা হয় সবচেয়ে স্বাভাবিক হিসেবে। অথচ সমাজের মাপকাঠিতে কম জনপ্রিয় অনেক পেশার মানুষই যে ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন সেটা বেমালুম ভুলে যাচ্ছি আমরা। উদাহরণ হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের কথা ধরা যেতে পারে। তারা তাদের নিজস্বতা, স্বকীয়তা দিয়েই বিখ্যাত হয়েছেন। তারা কেউ চিকিৎসকও নন, প্রকৌশলীও নন। হয়ত বলা হবে এ যুগে এগুলো সম্ভব নয়। আচ্ছা সাকিব আল হাসান কিংবা মাশরাফির কথাই ধরা যাক। একজন যদি দেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটার হন, আরেকজনকে বলা যায় দেশের ইতিহাসের সেরা অধিনায়ক। তারা তাদের ভালো লাগার জায়গাটিকেই বানিয়ে নিয়েছেন পেশা আর সেটি দিয়েই বিখ্যাত হয়েছেন। দেশকে আজ বিশ্ব দরবারে তুলে ধরছেন। তারা কি চিকিৎসক, নাকি প্রকৌশলী?

সেদিন তাদের মা বাবা যদি তাদের আটকে রাখতেন তাহলে কি আমরা সাকিব আল হাসান বা মাশরাফি বিন মুর্তজাকে পেতাম?

তবে তাদের সাফল্যের এই রাস্তাটা খুব সহজ ছিল না, অনেক চড়াই উৎরাই পার করেই তাদের এখানে আসতে হয়েছে। নিজের ইচ্ছাশক্তি আর দৃঢ় মানসিকতার মাধ্যমে হার মানিয়েছেন অন্য সবাইকে। নিজেদের শখ, ভালো লাগার জায়গাটা কিংবা করতে চাওয়াটাকেই বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছেন। আর দিনশেষে নিঃসন্দেহে হয়েছেন একজন সফল ব্যক্তিত্ব।

পেশা নির্বাচনের সকলের স্বাধীনতা থাকাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে আমার কাছে মনে হয়। জীবনের সিংহভাগ সময়ই কাটাতে হয় পেশাগত কর্মেই। আর এই পেশাই যদি নিজের পছন্দের না হয়, অন্যের কথা শুনে ভুল পছন্দ বেছে নিতে হয়, তবে সারাজীবন ভুগতে হয় হতাশায়।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com