বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছিলেন বটবৃক্ষের ছায়ার মতো, সবসময় আগলে রাখতেন আমাদের। মা যেমন তার সন্তানের স্নেহ মমতা আর শাসন দিয়ে আগলে রাখেন তেমনি শিক্ষকেরাও ভালোবাসতেন আবার শাসনও করতেন।
দেখতে দেখতে পার হয়ে গেল চারটি বছর। নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে উঠলাম দশম শ্রেণিতে। প্রতিটা শিক্ষার্থীর স্কুল জীবনে স্বপ্ন থাকে দশম শ্রেণির সময় টাকে উপভোগ করার। আমিও অপেক্ষায় ছিলাম এই সময়ের। কিন্তু বিধি বাম। দশম শ্রেণিতে ক্লাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মহামারির জন্য স্কুল বন্ধ হয়ে গেল।
মহামারি করোনাভাইরাস কালো ছায়ার মতো আমাদের জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে একটি বছর। আমার জীবনের প্রতিটা অংশ স্কুলের প্রতিটা ধুলকিণার সাথে মিশে আছে। স্কুল জীবনের সবচেয়ে স্মৃতিময় সময় হচ্ছে হাসি, খেলা আর পড়ার সময়টা।
ক্লাসের ফাকে টাইম পেলেই গানের আসর বসাতো বন্ধু মেরাজুল ইসলাম। খুবই ভালো লাগত ওর গান। সত্যি খুব মনে পড়ছে সময়গুলো।
বন্ধু সিফাত যে সবসময় আমাকে সকল কাজে সবসময় সাপোর্ট করে আসত, আমার কিছু হলেই ও অস্থির হয়ে উঠত, আমাকে কেউ কিছু বললে তো কথাই নেই! তার সঙ্গে আর কি কখনো এক শ্রেণিতে বসে পড়তে পারব?
সিফাত, মেরাজুলের মতো মনিরুল, কাইয়ুম, তন্ময় কোনো অংশেই কম না। শুধু ছেলে বন্ধুই নয় আনিকা, অপর্না, রুকাইয়া, অলির মতো বন্ধু যাদের আছে তাদের আর কী লাগে। সব সময় পাশে পেয়েছি ওদের। পড়ালেখা তো আছেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সবাই কত আনন্দ করেছি। সবাইকেই খুব মনে পড়ছে। মহামারি না এলে কত স্মৃতিই তো জমত আমাদের।
বন্ধুদের কথা তো গেল, শিক্ষকদের কথা আর কী বলব! তারা একটি আশ্রয়ের নাম। আমি মনে করি আমার স্কুলের শিক্ষকেরাই পৃথিবীর সেরা শিক্ষক। কতোই না আন্তরিক তারা। ভালোবেসে শিক্ষকেরা তার প্রিয় শিক্ষার্থীকে একটি ডাক নাম দেয় আমাকেও দিয়েছেন। শুনতে চাও নামটা কী? ভূঁইয়া সাহেব। আমার স্কুলের একটি পরিচিত মুখ একটি পরিচিত নাম ভূঁইয়া সাহেব। যদিও আমার নাম ইমরান ভূঁইয়া! কিন্তু স্যাররা ডাকেন ভূঁইয়া বলেই। আর ছোটরা ডাকে ভূঁইয়া ভাই বলে।
যে স্যারের কথা না বললেই নয় তিনি ইয়ামীন স্যার। আমার বিদ্যলয়ের আইসিটি শিক্ষক। যার হাতে ধরেই সাংবাদিকতার হাতেখড়ি আমাদের। হ্যালোতে লেখার জন্য আগ্রহটা তিনিই জাগিয়েছিলেন।
কিশোর বাতায়নে ‘আমার জেলা আমার অহংকার প্রতিযোগিতায়’ সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যে দ্বিতীয় হই তার মাধ্যমে। তিনি সাহায্য করেছিলেন বলেই সম্ভব হয়েছে।
স্কুল জীবনের অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে যা লিখে শেষ করা যাবে না। আমাদের প্রধান শিক্ষক, শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক সবাই ভালোবাসতেন আমাকে। আহা আর কি ফিরে পাব এই সোনার জীবন?