প্রথম হওয়ার অনুভূতি

জীবনের দৌড়ে বরাবর আমি সবার শেষের কাতারের মানুষ। ইংরেজিতে অনেকে এরকম মানুষকে 'লুজার' বলে। ছোটবেলায় থেকেই লেখাপড়া কিংবা বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সব জায়গায় আমি ১০ জনের একজনও হতে পারিনি বেশির ভাগ সময়।
প্রথম হওয়ার অনুভূতি

গ্রামে আগে প্রতি বছর নানা উপলক্ষে খেলাধুলার আয়োজন হতো। এখনো মনে পড়ে জীবনের প্রথম দৌড়ে আমি সবার শেষে ছিলাম। তবে সেই আয়োজনে বিস্কুট দৌড়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করি। যেদিন খেলা হতো সেদিন মনে এত আনন্দ ছিল যে ভাত খাওয়ার কথা ভুলে যেতাম। জীনের প্রথম পুরষ্কার পেয়েছিলাম গায়ে মাখা সাবান। এরপর একবার বল নিক্ষেপ খেলায় দ্বিতীয় হয়ে ছিলাম। আর একবার প্রথম হয়ে ছিলাম মোরগ লড়াই খেলায়। সবাই প্রথম বললেও নিজেকে প্রথম বলতে লজ্জা করছিল কারণ প্রথম হওয়ার জন্য তেমন পরিশ্রম করিনি। সবাই লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিল, আমি দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই হঠাৎ বুঝলাম আমার প্রতিদ্বন্দ্বীরা একে অন্যের সঙ্গে লড়াই করে কুপোকাত, আর আমি প্রথম। পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে একটা মেলা মাইনের থালা হাতে দিল।

একবার আমাদের স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হলো। আমার গ্রামের সব সহপাঠী দুই একটা পুরষ্কার জিতে নিল। আমার ঝুলি তখনো শূন্য। কিন্তু শুন্য ঝুলি নিয়ে বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করছিল না। দুই জন সহযোগী নিয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের সামনে কৌতুক অভিনয় শুরু করলাম। আগে থেকে কোনো কিছু মাথায় ছিল না। কিন্তু চেয়ারম্যান আঙ্কেল হেসে কুটি কুটি আর আমার হাতে উঠল একটি আকর্ষণীয় গায়ে মাখা সাবান।

এরপর হাই-স্কুলের ছেলেদের সাথে কখনো কোনো প্রতিযোগিতায় টিকে পুরষ্কার নিতে পারিনি। আর স্কুল কিংবা কলেজ জীবনে মেধাবী তালিকার কোনো পুরষ্কারও হাতে আসেনি। অবশ্য দ্বাদশ শ্রেণিতে কোচিংএ একবার একটা কলম পুরষ্কার দেওয়ার কথা ছিল। তবে সেটা হাতে পাইনি।

আমার জীবনের যত অর্জন তার বেশির ভাগই হ্যালো থেকে পাওয়া। তার বড় কারণ আমি কাজকে ভালোবাসি আর ভালোবাসি সাংবাদিকতা। বাকিটা জীবনে যদি আর বেশি দূর যেতে না পারি তবুও আমার কোনো প্রাপ্তি অথবা অর্জন নেই বলে কোনো কষ্ট হবে না। হ্যালো আমার ভেতর তৈরি করেছে দেশত্ববোধ, মমত্ববোধ, সহমর্মিতা, নৈতিকতা, অসাম্প্রদায়িক চেতানার শিক্ষা। সুনাগরিক হওয়ার জন্য এগুলোর চাইতে জীবনে আর কী অর্জন হতে পারে। বিষাদময় ২০২০ সালের শেষে হ্যালোর বর্ষসেরা শিশু সাংবাদিকদের তালিকায় আমার নাম ঘোষণা করে। প্রথম পাঁচজনের একজন হওয়া এ পর্যন্ত জীবনের সেরা অর্জন। আমি পরিশ্রম করে প্রথম হয়েছি তাই প্রথম হওয়ার আনন্দটাও অনেক বেশি। হ্যালোর প্রতিটি সাংবাদিকই সেরা, আমি তাদের কাছে অনেক কিছু শিখি। ধন্যবাদ হ্যালো আর চিরকৃতজ্ঞ থাকব সাংবাদিকতার শিক্ষকদের কাছে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com