আব্বুর সঙ্গে প্রথম ঈদ, শেষ ঈদ

বন্দি সময়েও সবার জীবনে ঈদ এসেছিল। কিন্তু আমাদের জীবনে আর ঈদ আসবে না কখনো। 
আব্বুর সঙ্গে প্রথম ঈদ, শেষ ঈদ

বছরের পর বছর কিংবা যুগের পরে যুগ পার হবে কিন্তু ঈদ আসবে না। কারণ আমাদের সব আনন্দ নিয়ে আব্বু চলে গেছেন না ফেরার দেশে। 

গত দুই ঈদের মধ্যে এবারের পার্থক্য হলো গত ঈদে আব্বু ছিলেন আর এই ঈদে আব্বু নেই। গত বছরও একই সাথে ঈদের নামাজ পড়েছি। আজ আব্বু নেই, কোথাও নেই। 

করোনা চলে যাবে। পৃথিবী আবার ছন্দ মুখর হবে। জেদ্দা থেকে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে ফ্লাইট চালু হবে। কিন্তু সেই ফ্লাইটে করে ফিরবেন না আমার আব্বু। 

এই বছরের ১২ এপ্রিল রাত পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। সেই রাতেই হঠাৎ করে আব্বুর স্ট্রোক হয়। ১৯ এপ্রিল না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। কোনো ফ্লাইট না থাকায় শেষ বারের মতো তাকে দেশে আনা যায়নি। এটা যে আমার জন্য কত বড় দুঃখের। 

আব্বু দীর্ঘ তিনযুগ প্রবাসে থেকেছেন শুধুই আমাদের জন্য। যেন আমরা ভালো থাকি, আমরা লেখাপড়া করতে পারি ভালো ভাবে। নিজের কথা একদমই ভাবেননি।

নিজেকে কখনো প্রশ্ন করিনি আমার কী নেই? আব্বু ছিল সব ছিল তাই আর কোনো অভাব বোধ করিনি। আমার নিজস্ব কোনো প্রয়োজন কোনোদিন আব্বুকে বলতে হয়নি। প্রয়োজন আব্বু বুঝে উঠতেন। তাই সব দিয়ে দিতেন।

আমার জন্মের পর আব্বু কখনো একটানা ছয় মাস দেশে থাকেননি। তার সঙ্গে আমার স্মৃতিও কম। টুকরো সময়ের টুকরো টুকরো স্মৃতি মাথায় ভীড় করে। হাতড়ে দেখি এত কম স্মৃতি তার সঙ্গে আমার। তার স্মৃতির অভাববোধ করি খুব। 

শেষ দুই এক বারের স্মৃতিগুলো খুব উজ্জ্বল। এক সাথে বাজারে যাওয়া, সকালে ঘুরতে বের হওয়া। ২০১৯ সালে আব্বুর সঙ্গে জীবনে প্রথম ঈদ উল ফিতরের নামাজ পড়ি।

এরপর ২ জুন প্রবাসে চলে যান শেষ বারের মতো। যাওয়ার সময় এক সাথে একটা ছবি তুলেছিলাম। এটাই ছিল আমাদের এক সঙ্গে তোলা প্রথম ও শেষ ছবি। গত বছর একই সাথে ঈদের নামাজ প্রথম ও শেষ বারের মতোই পড়েছিলাম। 

বাবারা কেনো মোমবাতির মতো আলো নিভিয়ে চলে যায়? বাবারা মহান, বাবাদের আসলে মৃত্যু হয় না। তারা সারা জীবন বেঁচে থাকেন রেখে যাওয়া আদর্শে, মহৎ কাজে, সন্তানের অন্তরে।

আমার আব্বুও মরে যাননি। বেঁচে থাকবেন আমৃত্যু মানুষের কাছে, বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ের মণিকোঠায়।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com