আমার পাহাড় ভালো লাগে। প্রতিবারই নতুন করে প্রকৃতির প্রেমে পড়ি। কয়েক মাস আগে ঘুরতে গিয়েছিলাম বান্দরবান। ভ্রমণের দিন রাতে আমরা যাত্রা শুরু করি।
সেখানকার সড়কের কথা আলাদাভাবে না বললেই নয়। এত আঁকাবাকা সড়ক আমি কখনো দেখিনি। খুব দক্ষতা না থাকলে এখানে গাড়ি চালানোও বিপদজনক।
আমরা যখন বান্দরবান জেলায় প্রবেশ করলাম তখন রাতের আঁধার কেটে গেছে, আকাশ নীলচে রঙ ধারণ করেছে। বাস থেকেই দেখছি ছোট ছোট পাহাড়ের পাশ দিয়ে সূর্য উঠছে।
ভোর ৬ টার দিকে আমরা পৌঁছাই বান্দরবান বাস টার্মিনালে। সেখানে নেমে চলে গেলাম রিসোর্টে। পরিচ্ছন্ন হয়ে নাস্তা সেরে আমরা রওনা হলাম বান্দরবানের প্রধান আকর্ষণ নীলাচলে।
সেখানে গিয়ে জানলাম আমরা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০০ ফুট উপরে। দু চোখ যতদূর যাচ্ছিল শুধু সবুজের সমারোহ দেখছিলাম৷ নীলাচল পৌঁছে প্রকৃতি কতটা সুন্দর হতে পারে তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। তারপর আমরা একে একে চিম্বুক পাহাড়, নীলগিরি এবং স্বর্নমন্দির দেখে প্রথম দিনের অভিযান শেষ করি। ক্লান্ত দেহ কিন্তু সতেজ মনে আবার রিসোর্টে ফিরলাম, এবং বিশ্রাম নিলাম।
পরদিন আমরা যাত্রা করলাম বগালেক, কেওক্রাডং পাহাড়ে। রুমা বাজারে এসে আমাদের নাগরিকত্ব দেখিয়ে, অঙ্গিকারনামায় সাক্ষর করতে হলো।
বগালেকের সড়ক আমার দেখা সেরা সড়ক। প্রায় ৯০ ডিগ্রি বরাবর খাড়া আবার ঢালু। সমতল কোনো রাস্তা নেই। এই এক অসাধারণ ভয়াবহ অভিজ্ঞতা।
বগালেক বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতায় স্বাদু পানির হ্রদ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২৪৬ ফুট উচ্চতায় এটি অবস্থিত। স্থানীয়দের মধ্যে এই হ্রদ নিয়ে অনেক গল্প আছে। অনেকে এটাকে পাহাড়ি দেবতার হ্রদও বলে থাকে।
চারপাশে সবুজের ঝাঁক, মাঝে স্বচ্ছ পানি। তবে এর গভীরতা এত বেশি যে সেনাবাহিনী সচরাচর খরা মৌসুম ছাড়া গোসল করার অনুমতি দেয় না। আমরা যেহেতু খরা মৌসুম অর্থাৎ গ্রীষ্মের মধ্যে গিয়েছিলাম তাই আমরা গোসল করতে পেরেছিলাম।
এক রাত বগালেকে অবস্থান করলাম। এখানে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর নেটওয়ার্ক খুব একটা পাওয়া যায় না। নেটওয়ার্কবিহীন কাটল একটা দিন। এখানকার মানুষগুলো খুব বন্ধুসলুভ। নানা রকমের অভিজ্ঞতায় দিন শেষ হলো।
এক রাত কাটিয়ে সকালে নাস্তা সেরে আমরা বগালেক থেকে কেওক্রাডং পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কেওক্রাডং বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ উঁচু পাহাড়। এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩২৩৫ ফুট।
পাহাড়ের কাঁচা সড়কে মাঝে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিল। খুব ভয়ানক সড়ক। পিচ্ছিল আর আশেপাশে খাদ। প্রায় তিনঘণ্টা হাঁটার পর আমরা একটা ঝর্ণার কাছে পৌঁছালাম। যার নাম চিংড়ি ঝর্ণা।
একটু বিশ্রাম নিয়ে আমরা আবার রওনা দিলাম। প্রায় আরো দুই ঘণ্টা হাঁটার পর পৌঁছালাম দার্জেলিং পাড়ায়। বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিষ্কার গ্রাম এটি।
দুপুরের খাবার এখানে খেলাম আমরা। পাহাড়ি বন মোরগ, জুম চাষের চাল, আরো পাহাড়ি অনেক খাবার।
ঘণ্টা খানের হাঁটার পর আমরা পৌঁছে গেলাম কেওক্রাডং।
প্রকৃতি যেন তার সবুটুকু দিয়ে সেজেছে। মায়ানমারের কাছাকাছি হওয়ায় সেখানকার অনেক পাহাড় এখান থেকে দেখা যায়।
কেওক্রাডং আমরা একরাত থাকলাম। তারপর নেমে আসলাম বগালেকে। সেখান থেকে আমরা রুমা বাজার এসে হঠাৎ আরেকটা ঝর্ণার খোঁজ পেলাম, রিঝুক ঝর্ণা।
দুটো নৌকা ভাড়া করে আমরা সাঙ্গু নদী ধরে চললাম ঝর্ণাটির উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণ দাপাদাপি করে ফিরে এলাম আবার রুমা বাজারে।
ব্যস্ত নগর, চেনা শহর, তিলোত্তমা ঢাকা আমাদের ডাকছে। আবার ফিরে এলাম। কিন্তু এখনো ভোলা যায় না সেই দৃশ্যগুলো।