লকডাউন বলে ঘুম থেকে এত বেলা করে ওঠা। টিভির দিকে একটু চোখ রাখতেই নিচ থেকে শুনতে পেলাম এক নারী সাহায্যের জন্য এসেছেন। আমি দ্রুত উপরতলা থেকে কয়েন নিয়ে নিচে গেলাম।
দেখতে পেলাম এক বয়স্ক নারী। বয়স হবে আনুমানিক ৫০। তার অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন নিচের ভাড়াটিয়াদের কাছে। আমিও শুনলাম তার কথাগুলো।
বলতে বলতে তার চোখের কোণায় পানি চলে আসে। আমার বেশ মায়া হচ্ছিল। মনেও হচ্ছিল না অনেক আগে থেকে ভিক্ষা করেন, হয়ত অভাবে পড়েই এখন হাত পাতছেন। হাতে করে আনা পাঁচ টাকার দুটি কয়েন তাকে দিয়ে বললাম, দাঁড়ান একটু।
এটা বলে উপরে চলে আসলাম। আব্বু-আম্মা দুজনেই ঘুমাচ্ছিলেন। ঘুম থেকে তুলে কাউকে কষ্ট দিলাম না। আমার কাছেও টাকা নেই। লকডাউনে বাইরে যাওয়া হয়না তাই বাসা থেকে টাকাও নেয়া হয় না। যাই হোক কিছু টাকা আর চাল ব্যবস্থা করে উনাকে দিলাম।
তিনি বলছিলেন, স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। তবুও পরিবারে তেমন অভাব ছিল না। কমবয়সী একটা ছেলে ছিল, রাজমিস্ত্রীর কাজ করত। মোটামুটি একটা সুখী পরিবার। মিস্ত্রীদের উপার্জন খারাপও না। সারা বছর কাজ পায়। ছেলেকে বিয়ে করানো হয়, দুটো বাচ্চাও হয়। আর পরিবারে ছিল এক মেয়ে। সবকিছু মিলে সুখেই দিন কাটছিল।
একদিন ছেলে কাজে গিয়ে উঁচু ভবন থেকে পড়ে যায়। তার বাম হাত আর পাঁজর একদম থেতলে যায়। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ভর্তি করা হয় তাকে। চিকিৎসক এক হাত কেটে ফেলে। সব মিলিয়ে চিকিৎসা খরচে প্রচুর টাকা দরকার হয়।
জমি-জমা যা ছিল সব বেচা শুরু করে দেয় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলের জীবন বাঁচাতে। ধার-দেনাও করে ফেলে। কিন্তু মাসখানেক পর ছেলেকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
আমার এতটাই খারাপ লাগছিল যে, ইচ্ছে হচ্ছিল তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করি। আমি আবার উপরে এসে কিছু কাপড় আর স্যান্ডেল একটা ব্যাগে করে নিয়ে তাকে দিয়ে দেই। ভাবছিলাম আমরা প্রতিদিন টেলিভিশন, সংবাদপত্র খুললেই কত মৃত্যুর খবর শুনি কিন্তু এসবের আড়ালে একেকটা পরিবারের যে কত সংগ্রাম, কত বেদনা লুকিয়ে থাকে তার খবর কয়জন রাখি। একটা মৃত্যু একটা পরিবারকে বিপর্যস্ত করে দেয়।