ধর্মীয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নানা শর্ত সাপেক্ষে নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ১২টি শর্তে মসজিদে নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, 'সীমিত আকারে' খোলা হয়েছে শপিংমল। এছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ নানা স্বাস্থ্যবিধি মানতে হচ্ছে। এখনো খোলা হয়নি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
প্রায় দুইমাস ধরে কার্যত অবরুদ্ধ দশায় সময় কাটছে। দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে পারি না, স্কুলও বন্ধ। এত কড়াকড়ির মধ্যে শুধু হাসফাস লাগছে।
বাড়িতেই বেশিরভাগ সময় কাটছে এখন৷ মাকে টুকটাক কাজে সাহায্যও করছি। আমার মা একজন গৃহিনী, তাকে বাড়ির চারদিক সামলাতে হয়। লকডাউনের ফলে লক্ষ্য করে দেখলাম মা কতকিছুই না করেন, যা আমরা খেয়াল করি না বা পাত্তা দেই না। কখনো ঘুম থেকে উঠে দেখি মা সেরে ফেলেছেন অর্ধেক কাজ।
আমাদের জন্য খাবার তৈরি করা, ঘরবাড়ি ঝাড়ু দেয়া, থালাবাসন পরিষ্কার করা, বাড়ির আশপাশগুলো দেখাশোনা করা, আমার যত্ন নেয়া কত দায়িত্ব একটা মানুষের ঘাড়ে।
তার যেন ছুটি নেই, অবসরও নেই, নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টাও নেই। জ্বর হোক কিংবা যেকোনো অসুস্থতা, তাকে রান্নাঘরে চৌকাঠ মারাতে হবেই।
আমাদের প্রচলিত সমাজে সাধারণত নারীর এই কাজকে মূল্যায়নই করা হয় না, তাদেরকে সাহায্যও করতে চাই না। যে যার মতো ব্যস্ত থাকি।
এই দুই মাস লকডাউনে থেকে ঘুরতে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে গেছি কিন্তু মা তো লকডাউনে থাকেন বারোমাসই। তার কোনো অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই, অস্থিরতাও নেই।
বেঁচে থাকতে প্রতিটি মানুষেরই বিনোদন দরকার। তাই আমরা বনভোজন করি, গান-নাচ দেখতে যাই, কখনো পাহাড় কিংবা সাগর ভ্রমণে যাই। মাকে আমরা কখনোই সঙ্গী করি না। অথচ তার কল্যাণেই এই সজ্জিত পৃথিবী উপভোগ করতে পারছি।
কোথাও বেড়িয়ে এলে মা আমাদের ছবি দেখতে চান। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব জিজ্ঞেস করেন, কী কী করেছি, কত মজা হয়েছে ইত্যাদি। তারও তো হয়ত মনে মনে এই লকডাউন ভেঙে একটু মুক্তি পেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তার ইচ্ছাকে আমরা কোয়ারেন্টিনেই রেখে দিচ্ছি বছর বছর ধরে।