বুঝতে বাকি রইল না আমার উপর ঝড় বইবে। তাই তখন ভয়ে বাড়ি থেকে একটু দূরে অন্ধকারে ঝোপের মধ্যে বসে রইলাম। কিন্তু বাড়ি থেকে সবার কথা আমার কানে আসছিল।
বাড়ির সবাই চিন্তিত কোথায় গেলাম আমি? দুই, তিন ঘণ্টা পর মা তো কান্নাকাটি শুরু করে দিল। তারপর গ্রামে খুঁজতে বের হলেন মা। এই ফাঁকে আমি ঝোপ থেকে বের হয়ে বাড়ি আসলাম আর বড় আপুকে বললাম আমার বইগুলো দে, আমি পড়তে বসব।
গ্রামে আমাকে না পেয়ে কান্না করতে করতে ফিরে আসলেন মা। তারপর মা বাড়ি আসতেই আপু জানাল আমি ফিরেছি। সেদিন মা আর মারেননি, বরং জড়িয়ে ধরেছিলেন। মায়ের কান্না দেখে আমিও কেঁদে ফেলেছিলাম।
আরেকদিন গাছে উঠে কাঁচা আম পাড়ছিলাম। মেজ আপু মাকে বলে দিলেন। সেদিন আর কেউ আমাকে রক্ষা করতে পারেনি।
মনের ক্ষোভে বাড়ি থেকে সারা দিনে ১৫ কিলোমিটার হেঁটে মামার বাড়ি চলে যাই। পরে আমার এক ভাই সন্ধ্যায় পৌঁছে দেন। সেদিন মা আমার চিন্তায় অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন।
ছোট বেলায় আমি কারো সাথে ঝগড়া করলে মা আমাকে বেশি বকতেন। মায়ের পিটুনির ভয়ে তাই ভদ্র হয়েই থাকতাম। আর তখন মনে হতো, নিজের ছেলেকে কেউ এইভাবে মারে? উনি নিশ্চয় আমার আসল মা নন। খুব কষ্ট লাগত। সব মায়েরা তাদের সন্তানের ভালো চায়।
এখন বুঝি সেই শাসন কেন করতেন।
শেষ ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় পিটুনি খেয়েছিলাম। সেই একঅই কারণ, বাড়ি ফিরতে দেরি হয়েছিল। তবে এই শাসন এখন নেই। মাঝে মাঝে বকাঝকা করেন।
শিশুদের শাসনের জন্য কখনো শারিরীক নির্যাতন কাম্য নয়। তবে মাঝে মাঝে মনে হয় মা শাসন করেছেন বলে আজ আমি ভালো আছি।
আরেকটা কথা না বললেই নয়। আমার মা খুব ভালো রান্না করেন। সবাই তার রান্নার খুব প্রশংসা করে। আমার প্রিয় খাবারগুলো তিনি আরো বেশি মজা করে রান্না করেন। মা আচার বানাতে ভালোবাসেন। সেই আচার চুরি করে খেতে গিয়ে এক লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়েছিলাম। আচার নিতে গিয়ে মাটির ঢাকনা ভেঙে ফেলেছিলাম। মধুর শৈশব আরো মধুর হয়েছে মায়ের জন্য।
ছোটবেলায় অনেক ভুল করতাম। সেগুলোর কখনো বিচার হতো আবার কখনো ক্ষমা পেয়ে যেতাম। তবে বড় ভুল করলে আগেই বই নিয়ে পড়তে বসে যেতাম তখন মা আর বকতেন না।
মায়েরা হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। সব মায়ের প্রতি রইল শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। তাদের ভালো হোক।