যুগ যুগ ধরে গায়ের রঙ বা বর্ণ নিয়ে বিরুপ ধারণা পোষণ করা চলে আসছে। এখানে মানুষের ব্যবহারের বা চরিত্রের চেয়ে তার গায়ের রঙটাই মুখ্য। অনেক ক্ষেত্রে মানুষের গুণ, প্রতিভার চেয়ে গায়ের বর্ণ দিয়েই তাকে বিচার করে ফেলা হয়।
বৈজ্ঞানিক হিসাব-কিতাব একদমই আলাদা। আমি এক জায়গায় পড়েছি, মানুষের শরীরে মেলানিন নামে এক ধরনের পিগমেন্ট থাকে। এর ধরণ ও পরিমাণের ওপরেই নির্ভর করে আমাদের গায়ের রঙ।
মেলানিন দুই প্রকার হয়। ইউমেলানিন ও ফিউমেলানিন। ইউমেলানিন বাদামি বা কালো রঙের পিগমেন্ট, আর ফিউমেলানিন লাল বা হলুদ রঙের পিগমেন্ট। এ মেলানিনগুলো মেলানোসাইটস নামে একটি কোষে তৈরি হয়। এই কোষ থাকে আমাদের ত্বকের বাইরের অংশে অর্থাৎ এপিডার্মিস স্তরে।
সাধারণত শরীরে ইউমেলানিনের পরিমাণ যত বেশি হয়, গায়ের রঙ তত গাঢ় হয়। আবার ফিউমেলানিনের পরিমাণ বেশি হলে গায়ের রঙ হালকা হয়। এছাড়া শরীরে পিগমেন্টের পরিমাণ যত কম থাকে, ত্বকের রঙ ততই হালকা হয়। আবার পিগমেন্ট বেশি থাকলে ত্বকের রঙ গাঢ় হয়।
পিগমেন্টের পরিমাণ বা ধরন একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম। মূলত জিনগত পার্থক্যের কারণে মানুষের শরীরে মেলানিন পিগমেন্টের ধরন ও পরিমাণ ভিন্ন হয়। এ কারণেই মানুষের গায়ের রঙ কালো কিংবা সাদা হয়ে থাকে।
কালো রঙকে ভাবা হয় অশুভ। যেমন কালো বিড়ালকে অশুভ বলা হয়। তেমনি কালো রঙের মানুষদের প্রতি ঠিক তেমনটাই ধারণা প্রচলিত। কারো সন্তান কালো হলে দেখা যায় পরিবারের সবার মন খারাপ হয়ে যায়। তা যদি কন্যা সন্তানের বেলায় এমন হয় তাহলে বাবা-মাসহ পরিবারের সবার কপালেই চিন্তার ভাঁজ পড়ে।
অভিভাবকরা বলে আমার সন্তান কালো, তাকে কি এই রঙের জামায় মানাবে? জামার মতো প্রতিটা ক্ষেত্রেই আমরা বর্ণ নিয়ে অজান্তেই আঘাত করে থাকি। পৃথিবীতে সবার অধিকার সমান, সেটা আমরা কখনো স্বীকার করতে চাই না।