গণমাধ্যমে প্রবেশ গল্প

আফরোজা দিল মুনমুন ম্যাডাম সুযোগ করে দেন বাংলাদেশ বেতারের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠান "শিক্ষার্থীদের আসর"এ অংশগ্রহণ করার।
গণমাধ্যমে প্রবেশ গল্প

২০১৭ সালের ২১ মে  শ্রেণি শিক্ষক এসে নবম শ্রেণির কক্ষে  বাংলাদেশ বেতারে অনুষ্ঠান করতে ইচ্ছুকদের নাম লিখে নিয়ে যান। নাম দেই আমিও। ২৫ মে স্যার আমাকেসহ আমার তিনজন সহপাঠীকে জানান বাংলা ম্যাডাম আফরোজা দিল মুন মুন ম্যাডামের সাথে বাংলা প্রথম পত্রের "প্রাণ" কবিতার উপরে রেডিও অনুষ্ঠান করতে হবে এবং আজই হবে রেকর্ডিং।

ম্যাডাম আমাদের স্বল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু বুঝিয়ে দেন এবং আমরাও দ্রুত প্রস্তুতি নিয়ে চলে যাই বাংলাদেশ বেতার রাজশাহী কেন্দ্রে। বেতার কেন্দ্রে প্রবেশের সময় যেনো মনে হলো প্রবেশ করলাম কোনো নতুন জগতে। সেখানে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর আমাদের রেকর্ডিং এর ডাক আসে। জীবনের প্রথমবার ম্যাডামের সাথে প্রবেশ করি রেকর্ডিং রুমে। সেখানে থাকা মাইক্রোফোন আমার কাছে বড্ড আকর্ষণীয় লেগেছিল। রেকর্ডিং শুরু হলো এবং এবং সবকিছু ভালোমত শেষ হলো কিন্তু কেন যেনো ঘরটি থেকে বের হতে বের হতে মন চাইছিলো না। আমি চলে আসলেও আমার মনটি থেকে যায় সেই রেকর্ডিং রুমে। রেডিংতে যখন আমাদের অনুষ্ঠানটি শুনলাম তখন আমার খুশির শেষ নেই তবে মনে আক্ষেপ শুরু হলো যদি এরকম নিয়মিত হতো তবে তো বেশ ভালোই হতো। নিয়মিত রেডিও শুনতে শুরু করি। রাজশাহীর কমিউনিটি বেতার রেডিও পদ্মা  শুনতে ভালোই লাগত। হঠাৎ ২০১৮ সালে  একদিন রেডিও পদ্মাতে রেডিং জকির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি শুনি। আমি শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে কান পেতে ভালো করে শুনি কারণ আমি তখন দশম শ্রেনির ছাত্র। আমি সরাসরি তাদের অফিসে যাই এবং জিজ্ঞেস করি আমি আবেদন করতে পারব নাকি জবাবে সেখানকার স্টেশন ম্যানেজার বলেন আবেদন করে যাও, দেখা যাক।

মানুষটিকে খুব ভালো লাগে আমার, তার সাথে কথা বলে জানতে পারি তিনিও আমাদের স্কুলের ছাত্র ছিলেন এবং গড়ে উঠে সখ্যতা। তার পরের দিন সেপ্টেম্বর মাসে আমি আমার একটি সিভি জমা দেই। অফিসে যাওয়া আসার মাধ্যমে আরো কিছু রেডিং জকিদের সাথে গড়ে উঠে সখ্যতা। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে আমাকে ইন্টারভিউ এ ডাকা হয়। আমার সিরিয়াল ছিল শেষের দিকে। আমি সরাসরি স্কুল থেকেই সেখানে গেছিলাম স্কুল ড্রেস পরে। ইন্টারভিউ রুমে ঢুকতেই চেয়ারম্যান স্যার বলে "তুমি কলেজিয়েট স্কুলে পড়? এখানে কী করতে এসেছো?" আমি বলি, স্যার রেডিও জকির জন্য ইন্টারভিউ দিতে।

তিনি আমার সাথে খুবই ভালো ব্যবহার করেন যেন তিনি আমার খুব আপন জন এবং আমাকে এসএসসি পরীক্ষার পর যোগাযোগ করতে বলেন। যথারীতি  পরীক্ষা শেষে গেলে তিনি আমাকে নাফিস রহমান নামের রেডিও জকির সাথে আলাপ করিয়ে বলেন তিনি আমাকে নিয়োগ না দিতে পারলেও নাফিস ভাইয়ার কাছে শেখার অনুমতি দিতে পারবেন। আমি তো মহা খুশি। নাফিস ভাইয়ার সহযোগিতায় প্রায় দুই মাসের মতো সেখানে কাজ করার সুযোগ হয়, শিখতে পারি অনেক কিছু কিন্তু রেজাল্টের পরে পড়াশোনার চাপ বাড়ায় সেখানে নিয়মিত হয়ে উঠা সম্ভব হয়নি। নিতে হয় একটি লম্বা বিরতি, কারণ বাসা থেকে মানছিল না।

হঠাৎ bdnews24.com এ শিশু সাংবাদিকতার বিষয়ে হ্যালোর কার্যক্রম দেখে দ্রুত রেজিষ্ট্রেশন করি। কিছু লেখা পাঠাই, তার মধ্যে কিছু বিষয় ভুল থাকায় তা ছাপা হয় না তবে আমি ভুলগুলো ব্যাপারে  জানতে থাকি। ২৫ ডিসেম্বর আমাকে ফোন দিয়ে জানানো হয় শিশু সাংবাদিক প্রশিক্ষণের কথা।

৩১ ডিসেম্বর শুরু হয় প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণে আমার প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন সোলাইমান নিলয়। অনেক জানা অজানা বিষয়ে বন্ধুর মতো আচরণের মাধ্যম্যে সাংবাদিকতার প্রাথমিক ধারণা দেন তিনি, সেখানে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে আমার মতো আরো ১৯ জন শিশু সাংবাদিকের সাথে এবং আমাদের দেওয়া হয় শিশু সাংবাদিকতার সার্টিফিকেট। এই প্রশিক্ষণ গণমাধ্যম জীবনে অনেক দূর নিয়ে যেতে সহযোগিতা করবে বলে মনে করছি। এভাবেই প্রবেশ করে চলেছি গণমাধ্যমে।

আগামিতে যাতে আরো এগিয়ে যেতে পারি সেই জন্য পরিবার ও সকলের সহযোগিতা কামনা করি।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com