জন্মেছি যেন ভর্তিযুদ্ধের জন্য!

প্রতিবছর জুন-জুলাই মাসে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে আমাদের দেশে শুরু হয় এক যুদ্ধ!
জন্মেছি যেন ভর্তিযুদ্ধের জন্য!

কিসের যুদ্ধ? বলছি!

প্রতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয় কম-বেশি প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী৷ এই শিক্ষাবর্ষে অংশ নিয়েছে ১৩ লাখ ৫১ হাজার ৫০৫ জন শিক্ষার্থী। এদের অনেকের স্বপ্ন চিকিৎসক হবে, কারো বা স্বপ্ন সে হবে প্রকৌশলী। এছাড়াও হরেক রকম স্বপ্ন বুনতে থাকে একজন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার শিক্ষার্থী।

পরীক্ষা দেওয়ার পর থেকে যেন এদের হাফ ছেড়ে বাঁচার উপায় নেই। শুরু হয় ভর্তি পরীক্ষা নামক এক মহাযুদ্ধ৷ যেখানে কাঙ্খিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সুযোগ পাওয়ার জন্য শুরু হয় ইঁদুর-বিড়াল দৌড়।

পছন্দমতো বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সুযোগ পাওয়া যেন এক অর্থে সোনার হরিণ পাওয়ার সামিল।

উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি-ইচ্ছুকদের সবারই পছন্দের শীর্ষে থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন কম থাকায়, ভর্তি পরীক্ষা দিয়েই সবাইকে সেই কাঙ্খিত সোনার হরিণ পেতে হবে৷ এ ব্যাপারে কোন আমার কোনো সন্দেহ নেই।

তবে এই এক কিংবা দুই ঘণ্টার পরীক্ষায় বিগত ১২ বছরের শিক্ষার কতটুকু মেধা মূল্যায়ন করা যায় বা হয় তা নিয়ে আমি কিঞ্চিত চিন্তিত!

অনেকে তো পরীক্ষার হলে ঘাবড়ে গিয়েই সবকিছু গুলিয়ে ফেলে আসে।

সেই যাই হোক। আমিও এই বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি। তথাকথিত আমিও এখন সেই ভর্তিযুদ্ধের ইঁদুর-বিড়াল দৌড় প্রতিযোগিতার একজন যাত্রী!

আমার অনেক সহপাঠীকে দেখেছি এই ভর্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে হতাশ হয়ে পড়তে৷ অনেকের বাবা-মাকে এও বলতে শুনেছি যে, "ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পেলে তুই আর আমাদের পরিচয় দিবি না!"

বাবা-মা-সন্তানের সর্ম্পকের ভিত্তি কি এতটাই ঠুনকো যে সামান্য এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারা এ সর্ম্পকটার শিকড়কে নাড়িয়ে দেয়?

এইসব কথা ছাড়াও রয়েছে কিছু অতি উৎসাহি লোক যারা এই ভর্তিযুদ্ধের সময় হয়ে যান বিজ্ঞবান ব্যক্তি। একেক জনের একেক রকম মতবাদ আসতে থাকে!

ব্যাপারটা অনেকটা এমন হয় যে, ডুবে যাওয়া একটি জাহাজকে আপনি উদ্ধার না করে আরও ডুবিয়ে দিচ্ছেন।

আবার, ঢাকার বাইরে থেকে যারা ঢাকায় পরীক্ষা দিতে আসেন বা যারা ঢাকার বাইরে যান পরীক্ষা দিতে তাদেরকেও ভুগতে হয় নানা ধরণের সমস্যায়। আবাসন ও খাবার সমস্যা, সড়ক বা রেলপথে যাত্রা ভোগান্তি, অর্থনৈতিক ব্যাপারসহ নানা সমস্যা তো আছেই।

আমার এক বন্ধুকে মাত্র নয় দিনের মধ্যে ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রাম ও খুলনা ঘুরে আসতে হয়েছে শুধুমাত্র এই ভর্তিযুদ্ধের ইঁদুর-বিড়াল দৌড়ে অংশ নিতে।

আবার অনেক ভালো বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েও পরিবারের পছন্দ না হওয়ায় ভর্তি হতে পারছে না শিক্ষার্থীরা!

আমি এটা বলছি না যে শিক্ষা গ্রহণ না করতে৷ কেননা, শিক্ষার বিকল্প নেই৷ তবে এই ভর্তিযুদ্ধের সময় এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে অনেক শিক্ষার্থীরাই হয়ে পড়ে মানসিকভাবে অসুস্থ, হতাশাগ্রস্ত। এই সময় সবার উচিত সেই সব শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো, মনোবল বাড়ানো, সাহস দেওয়া৷

ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনি বলে যে তার পড়াশোনা শেষ বা ক্যারিয়ার শেষ এমনটা না ভেবে নতুন উদ্যোমে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য মনস্থির করা উচিত৷

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com