শিশু কেন শ্রমিক হবে!

একটা দেশ কাল কেমন থাকবে এটা আজকের শিশুদের দিকে তাকালেই হিসাব কষে নেওয়া যায়।
শিশু কেন শ্রমিক হবে!

প্রতিটা শিশুর মধ্যেই সুপ্ত প্রতিভা লুকিয়ে থাকে। যা বের করে আনার জন্য দরকার যত্ন, ভালোবাসা, উপযুক্ত পরিবেশ। একটা গোলাপ গাছে তখনি ফুল ফোটে যখন এটি যত্ন পায়। সার দিতে হয়, পানি দিতে হয়, নিয়ম করে রোদ দিতে হয়, আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। ঠিকঠাক দেখভাল করতে পারলেই গাছে ফোটে গোলাপ। এটি দেখতে যেমন আকর্ষণীয় হয়, তেমনি সৌরভ ছড়ায় চারপাশে। সার-কীটনাশক পরিপূর্ণভাবে না দেওয়া হলে আবার পোকা ধরে যায়। এতে নষ্ট হয়ে যায় ফুলের সৌন্দর্য।

শিশুদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রায় একই রকম। তাদের সঠিক লালন-পালন করতে পারলেই ভেতরের সত্তাটিকে আবিষ্কার করা যায়। তখন তারা গোলাপের মতো সুবাস ছড়াতে পারে।

জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে সব মানুষই শিশু। আমাদের দেশে শিশুর সংখ্যা মোট জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ। তারা যে খুব একটা ভালো আছে তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশে সাড়ে ৩৪ লাখ শিশু কর্মরত রয়েছে। এরমধ্যে শিশুশ্রমের আওতায় পড়েছে প্রায় ১৭ লাখ শিশুর কাজ।

শিশুরাও কাজ করতে পারবে তবে সেটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কিন্তু শিশুকে কেন কাজের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে? শিশুমন তো খেলতে চায়, মুক্ত পাখির মতো উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াতে চায়।

এর পেছনে মূলত কাজ করে অর্থনৈতিক সমস্যা। তিন শ্রেণির মানুষ দেখতে পাই আমাদের সমাজে- উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত। নিম্নব্ত্তি যাদের বলছি, তাদের প্রকৃতপক্ষে কোনো বিত্ত নেই। এই পরিবারের শিশুদেরই কাজে নেমে পড়তে হয় জীবন বাঁচানোর তাগিদে।

সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছে। হ্যাঁ বাস্তব সত্য হলো, টেকনাফ তেকে তেঁতুলিয়া সবখানেই শিশুদের স্কুলে যাওয়ার হার অনেক বেড়েছে। গৃহকর্মীর কাজ করালেও মা-বাবা শর্ত জুড়ে দেয় তাকে লেখাপড়া করাতে হবে। এটা নিঃসন্দেহে খুবই আশা জাগায় আমাদের মনে।

কিন্তু এই শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা পেলেও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদেরকে এখনো সাবলীল জীবন দিতে পারিনি আমরা।

আমি হ্যালোতেই অনেক গল্প পড়েছি, পরিবারের দায়িত্ব শিশুর কাঁধে। কেউ বাদাম বিক্রি করছে কেউবা পান সিগারেট, কেউ কারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ করছে, কেউ হাতে তুলে নিয়েছে গাড়ির স্টিয়ারিং। কয়লা খনি, ইট ভাটা তো আছেই।

কাজ করতে এসেও শিশুরা মজুরি বৈষম্যের শিকার হয়। কম টাকায় অনেক কাজ করিয়ে নেওয়ার ফন্দিটা অনেক মানুষের মাথাতেই থাকে। শুধু তাই নয় কর্মক্ষেত্রে নির‌্যাতনের শিকারও হয় শিশুরা।

হাতুড়ি পেটা, পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যা ইত্যাদি অনেক খবরই দেখি সংবাদমাধ্যমে। এগুলো শিশু হিসেবে আমাকে কষ্ট দেয়।

শিশুর দায়িত্ব রাষ্ট্রের নেওয়া উচিত। তারা পড়বে আর খেলবে। কাল হয়ত তাদের মধ্য থেকেই কেউ রাষ্ট্রপ্রতি, কেউ প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ শাসন করবে। হয়ত বিশ্ব জয়ও করবে তাদেরই কেউ।
 

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com