আমার প্রথম স্কুল ছিল একটি কিন্ডারগার্টেন। বলছিলাম প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সময়কার গল্প। প্রতি বছর আমাদের এখানে একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলের আওতায় একটি বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আমার জীবনের স্মরণীয় দিনটি ছিল ওই পরীক্ষার দিন।
তখন তো কত ছোট ছিলাম আমি! আমাকে বাবা পরীক্ষার হলে নিয়ে যান। আমাদের পরীক্ষার হল ছিল নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ মডেল বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে।
এই সেন্টারে আমাদের থানার বৃত্তির আওতাভুক্ত স্কুলসমূহের পরীক্ষা হয়। বাবার সাথে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করলাম ৩০ মিনিট আগে।
স্যাররা বলে দিলেন যে, আমার ছিটটা একেবারে শেষের কক্ষের কোণার প্রথম বেঞ্চে।
আমি আমার ছিটে গিয়ে বসলাম, ঠিক ১০ মিনিট পর দুইজন পুলিশ আমাদের পরীক্ষার রুমটায় প্রবেশ করলেন এবং অভিভাবকদের বাইরে যেতে বললেন।
তখন তো ছোট ছিলাম, পুলিশ খুবই ভয় পেতাম। আমাদের এলাকায় যদি কোনোদিন পুলিশ আসত, যদি আমি রাস্তায় তাদের গাড়ি যাওয়া দেখতাম দৌড়ে বাড়ি গিয়ে লুকিয়ে থাকতাম। তখন ভাবতাম যদি তারা আমাকে নিয়ে যায়। কিন্তু এখন আর সেই ভয় নেই।
ঠিক তখনই একজন পুলিশ ম্যান একজন অভিভাবককে প্রায় ধাক্কা দিয়ে বাইরে বের করে দেন। এটা দেখে আমার খুব খারাপ লাগে। ঠিক তখনই আমি এতোটা ভয় পেয়েছিলাম যে তা ধারণার বাইরে।
আগে বলেছি তো পুলিশকে ভয় পেতাম। সেই দিনটিতে ছিল বাংলা পরীক্ষা, যদিও ভয়ে কাতর ছিলাম তবুও ভালো লিখেছিলাম। আমি সবগুলো পরীক্ষাই খুব ভালো দিয়েছিলাম।
এই পরীক্ষার ফল দিয়েছিল দীর্ঘ এক বছর পর। যখন আমি দ্বিতীয় শ্রেণি প্রায় শেষ করে ফেলেছি তখনি রেজাল্ট আসে। আমি সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পাই। আমার বাবা মা শিক্ষকরা সবাই খুব খুশি হন।
এ দিনের ঘটনা আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের কারণ যেই দিনের পরীক্ষায় ভয় পেয়েছিলাম সেটি ছিল জীবনের প্রথম সার্টিফিকেট পরীক্ষা এবং যেটিতে আমি সফল হয়েছি। সেই দিনটিকে মনে করে আজকের পথ চলা।