সমাজে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার থাকার কথা হলেও এই সমাজ যেন কখনোই নারীদের কে সেই অধিকার দিতে চায় না। সব সময় নারীকে পেছনে রেখে সমাজ একা এগিয়ে যেতে চায়। আর কেউ যখন নিজের চেষ্টায় মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে তখন তার সামনে তুলে দেয় দেয়াল।
পরিবারই মূলত বৈষম্য শুরু করে। যদিও দিন বদলাচ্ছে। তবে এখনও অনেক পথ বাকি।
একটি ছোট ছেলে শিশু যখন বড় হতে থাকে তখন তাকে উপহার বা খেলনা হিসাবে মোটর বাইক, গাড়ি, রোবট ইত্যাদি ইত্যাদি দেওয়া হয়। সেই ছেলে শিশু সেই খেলনাগুলো দিয়েই তার শৈশব পার করতে থাকে। অন্যদিকে একটি মেয়ে শিশুকে খেলার জন্য কী দেওয়া হয়? পুতুল, হাড়ি পাতিল!! কেন? আমার প্রশ্ন কেন? একজন ছেলের জন্য আপনি যখন খেলনা কেনেন তখন কেন হাড়ি পাতিলের কথা আপনার মাথায় আসে না, আর একজন মেয়ে বেলায় কেন আসে না গাড়ির কথা?
পরিবার থেকেই কেন এই বৈষম্যর শুরু? একটি মেয়ের শিশুর কি খেলনা হিসাবে গাড়ি পছন্দ হতে পারে না? নাকি সমাজ ও পরিবারের করে দেওয়া একটি অন্ধ কালো নিয়মের বেড়াজালে তাকে খেলতে হবে এই হাড়ি পাতিল দিয়েই! বিজ্ঞবান, বিবেকবান সমাজের কাছে এ প্রশ্নের যেন কোন উত্তর নেই!
এছাড়াও যখন দেখি এলাকায় বা মাঠে ছেলে শিশুরা কোন বাধা ছাড়াই খেলা করছে, কিন্তু মেয়ে শিশুদের কে সেই গণ্ডি পেরোতেই দেওয়া হচ্ছে না৷ বরং তাদের কে সেই খেলনা হাড়ি পাতিল ধরিয়ে দিয়ে ঘরের এক কোণে জায়গা করে দিয়ে বলা হচ্ছে খেলার জন্য।
কোনো কোনো মেয়ের হয়তো ফুটবল খেলতে খুবই ভালো লাগে। হয়তো সে হতে চায় দেশের নামকরা এক ফুটবল খেলোয়াড়! কিন্তু তাকে তো ঘর থেকেই বের হতে দেওয়া হয় না! ফুটবল নিয়ে স্বপ্ন দেখা তো তার কাছে অনেক দূর! অথচ একজন ছেলে চাইলে ছোটবেলা থেকেই তার এই স্বপ্ন দেখা শুরু করতে পারে! তাহলে মেয়েদের ক্ষেত্রেই কেন এই বাধা?
আবার, ঘরের কাজ কর্মে সব সময় সেই ছোট মেয়ে শিশুকেই যেন সাহায্য করতে হবে৷ ছেলে সন্তানের জন্য তো ঘরের কাজ না। বরং তার যত্ন নেওয়ার জন্যই যেন সেই মেয়ে শিশুকে কাজ করতে হয়।
আবার পোশাক বা জুতা কেনার ক্ষেত্রেও দেখা যায়, রঙ নিয়ে বৈষম্য করতে! মেয়েদের জন্য গোলাপি ছেলেটার জন্যে নীল? বলতে পারেন কেন এই বৈষম্য?
পরিবার থেকেই শুরু হওয়া এই বৈষম্য সেই শিশুর পরর্বতী জীবনে খুবই বাজে একটি প্রভাব বিস্তার করবে নিঃসন্দেহে। ছোটবেলা থেকেই এই ধরণের পরিবেশ, সমাজে বেড়ে উঠা শিশুগুলোর কি সত্যি সঠিক মানসিক বিকাশ হয়ে থাকে?
শিশুবেলা বা ছোটবেলা থেকেই উন্নত মানসিকতা, আদব কায়দা, সহযোগিতা ইত্যাদি বিষয়গুলোর বীজ বপন শুরু হয়। এই সময়ে ছেলেরা যদি এই ধরণের বৈষম্য দেখে বড় হয়ে তাহলে তা অবশ্যই তার মন-মানসিকতায় বড় ধরণের একটি প্রভাব ফেলবে! হয়তো সেও মনে করবে পুরুষ হিসাবে সমাজে তার অধিকার, সম্মান, দাম বেশি এবং নারীরা বরাবরই অবহেলিত থাকবে, তার সেবায় নিয়োজিত থাকতে বাধ্য।
অদূর ভবিষ্যতে যদি এই ধরণের বৈষম্য, মন-মানসিকতা পরিবর্তন না হয় তাহলে কখনোই মেয়ে বা নারীরা সামনে এগিয়ে যেতে পারবে না৷ তাই পরিবার থেকেই শুরু হোক এই বৈষম্য দূর করার প্রক্রিয়া। নারী ও পুরুষকে দেখা হোক সমতার চোখে।