আমার এক আত্মীয় টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় থাকেন। পরীক্ষার পর দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার একটা ইচ্ছা ছিল মনের ভেতর। তাই এপ্রিল মাসের শেষের দিকে একটা সুন্দর দিনে আমরা রওনা হই ঘাটাইলেই উদ্দেশ্যে।
বইয়ের পাতায় অনেকবার এই মধুপুর গড়ের কথা পড়েছি। কিন্তু আমি তখনো জানতাম না যে ঘাটাইল থেকে মধুপুর গড় খুবই কাছে। হঠাৎই মনে পড়ল বললেই চলে। বিষয়টা আমি আমার আত্মীয়কে জানাই। তাই একদিন বিকালে রওনা হই মধুপুর গড়ের উদ্দেশ্যে।
ঘাটাইল থেকে মধুপুর গড়ে যেতে সময় লাগে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট। মধুপুরে ঢুকতেই দেখি চারপাশে সবুজের সমারোহ শুরু হয়ে গেল। চারপাশে মানুষজনকে দেখছি, সবুজ দেখছি।
তারপর প্রবেশ করি মধুপুর গড়ে। ঢুকতেই দেখি একটি পিকনিক স্পট। যেখানে সবাই পিকনিকের জন্য যায়। তারপর বনের ভিতর একটি স্কুল দেখতে পাই। ছোটদের স্কুল। যেখানে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করে। বনের ভেতর দিয়ে যে রাস্তাটা চলে গিয়েছে সেটি কাঁচা বললেই চলে। চারপাশে শুনতে পাচ্ছিলাম ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। ওই সময়টাতে খুবই উত্তেজিত ছিলাম। খুবই আনন্দিতও ছিলাম।
বনের ভেতরে প্রায় ৪-৫ তলা সমান একটি টাওয়ার ছিল। টাওয়ারটির সবচেয়ে উপরে উঠি আমরা। সেখান থেকে মনে হচ্ছিল পুরো মধুপুর গড়টায় যেন আমি আমার দুই চোখ দিয়ে দেখতে পাচ্ছি। পুরো জায়গাটাই সবুজ। নানান গাছে ভরা এই মধুপুর গড়। তারপর দেখলাম বনের ভেতরের একটা জায়গায় সীমানা তৈরি করে কয়েকশো হরিণ একসাথে রাখা। পরে স্থানীয়দের কাছে শুনলাম ওই হরিণদের রক্ষা করার জন্যই এই ব্যবস্থা করা।
হঠাৎ করে দেখি পায়ের কাছে কোথা থেকে জানি দুই-তিনটা বাঁদর চলে এসেছে। আস্তে আস্তে দেখি ওদের দেখাদেখি আরও কিছু বাদরও আসছে। দেখে খুব ভালোই লাগছিল। তারপর যেই একটি বাঁদর ছানার ছবি তুলতে গেলাম সাথে সাথেই সেই বাঁদরের তাড়া খেলাম। ভয়ের চোটে আমিতো দৌড়ে পালালাম।
আসার সময় অরনখোলার ভেতর দিয়ে আসছিলাম। জায়গাটা খুবই সুন্দর। রাস্তাঘাট খুবই পরিষ্কার। সেখানে কিছু গারো সম্প্রদায়ের মানুষকে দেখলাম।
সে যাই হোক মধুপুর গড়ে আমার অনুভূতিটা ছিল অসাধারণ। মাঝে মাঝে চোখের পাতা বন্ধ করলে এখনো সেই ছবিগুলো ভেসে ওঠে। তাই আরো একবার যেতে ইচ্ছে করে সেই মধুপুর গড়ে।