তাদের মতে মেয়ে মানুষ হলে উচ্চ মাধ্যমিকের বেশি যেন পড়ানোর দরকার নেই। অনেক মেধাবী তরুণী-কিশোরীরা ঝড়ে যাচ্ছে শুধুমাত্র এই উচ্চশিক্ষায় অংশ নিতে না পারার কারণে।
অনেক ক্ষেত্রেই এদেরকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাল্যবিয়ের ফলে তারা শারিরীক ও মানসিকভাবে ভেঙে যাচ্ছে। অল্প বয়সে তারা মা হচ্ছে।
যে বয়সে তার নিজেকে নিয়ে ভাবনার কথা ছিল, সে সময়ে তাকে ভাবতে হচ্ছে তার সন্তানকে নিয়ে।
এদের মধ্যে যারাও উচ্চশিক্ষা গ্রহণে সফল হয় তাদেরকে শুনতে হয় নানা ধরণের কথা। ‘মেয়ের বয়স হয়ে যাচ্ছে, বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন না কেন, মেয়েকে এত পড়িয়ে লাভ কী, তার থেকে ভালো বিয়ে দিয়ে দাও, মেয়ে মানুষের চাকরি টাকরি করে কী লাভ? বিয়ে দিয়ে দাও-’এসব কথা তো সবাইকে শুনতে হয়।
মেয়েদের ক্ষেত্রে কেন এত বাধা। মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার অধিকার কী তাদের নেই? তাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অধিকার আছে।
কিন্তু তাদের পায়ে জন্ম থেকেই পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজনসহ অনেক মানুষই শিকল পরিয়ে রেখেছেন।
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, "আমরা সমাজের অর্ধাঙ্গ, আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কীরূপ? কোনো ব্যক্তি এক পা বাঁধিয়া রাখিলে সে খোড়াইয়া খোড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষের স্বার্থ এবং আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে। তাহাদের জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য যাহা আমাদের লক্ষ্য তাহাই।"
এছাড়াও তিনি নারী ও পুরুষকে একই গাড়ির দুইটি চাকার সাথে তুলনা করেছেন! গাড়ির একটি চাকা ছোট বড় হলে যেমন চালানো যায় না, তেমনি একটি ছাড়া অন্যটি অচল।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন, "তোমরা আমাকে একটি মা/নারী দাও, আমি তোমাকে একটি শিক্ষিত জাতি দিবো!"
কিন্তু একটি প্রশ্ন রয়ে যায় মেয়েরা যদি শিক্ষিতই না হয়, তাহলে আমরা কীভাবে একটি শিক্ষিত জাতি পাবো?
নারী ও পুরুষ সমাজের অংশ। কোনো একটি অংশকে বাদ দিয়ে বা কোনো একটি অংশ ছোট করে আমরা কখনোই উন্নতি করতে পারবো না।
নারী অবলা নয়। এরাই আমাদের মা, বোন, খালা, বান্ধবী, প্রেমিকা, স্ত্রী। আমাদের উচিত মেয়েদের স্বপ্নগুলোকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া। নারী বলে অবহেলা না করে তাদেরকেও সামনে আগাতে দেওয়া উচিত। তাদের স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছাকে সম্মান করা। তাদের এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাধা হয়ে না দাঁড়ানো।