সীতাকুণ্ড, অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি

ঢাকার কোলাহলে যেন হাঁপিয়ে উঠেছিলাম, দরকার ছিল একটা বিরতির। সব ছেড়ে দুদিনের জন্য ঘুরতে যেতে চেয়েছিলাম কোথাও।
সীতাকুণ্ড, অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি

রোজার আগেই পরীক্ষা শেষ হলো, রোজা শুরু হতে আরো তিনদিন বাকি, এই তিনদিন কেই কাজে লাগানো যায়।

দেশ তখন টালমাটাল, ঘূর্ণিঝড় ফণীর আগমনের চিন্তায় আছে সবাই। তবে বের যে হতে হবেই আমাকে। আমি আর আমার বন্ধু জাহিদ ঠিক করলাম চট্টগ্রাম যাব।

সেই চন্দ্রনাথ পাহাড়ে, যেখানে শতবছরের পুরনো মন্দির রয়েছে রয়েছে এবং সেখান থেকে চট্টগ্রাম শহরটাকে দেখা যায়।

শুরু হলো ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা। রাত ৯টার বাসে আমরা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হই। মাঝরাতে গাড়ি কুমিল্লা শহরে একবার থামল যাত্রা বিরতীর জন্য।

ভোরের আলো ফুটছে মাত্র, পাখিরা বেরিয়েছে সবে, আমি কখনো পাহাড় দেখেনি, ক্লাসে  একবার পালামৌ গল্পে পড়েছিলাম। লেখক, বাঙালিদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, "মৃত্তিকার সামান্য স্তুপ দেখিলেই তাহাদের বড় আনন্দ হয়।" 

ঠিক এর বাস্তবিক প্রতিফলন আমার নিজের মধ্যেই পেলাম। বাস যখন সীতাকুণ্ডে প্রবেশ করল, রাস্তার ওপাশে সারিসারি পাহাড় দেখে যেন নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না, এত সুন্দর দৃশ্য প্রথবার দেখছিলাম বলে এমন হতে পারে। 

বাস থেকে যখন আমরা নামলাম উদ্দেশ্য সুমদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০২০ ফুট উপরের চন্দ্রনাথ পাহাড়।দিনের শুরুতে রোদ তার প্রখরতা তখনো শুরু করেনি, আমরা উঠতে শুরু করলাম। যেহেতু পাহাড় ওঠার অভ্যাস নেই আমাদের, কিন্ত উত্তেজনা আমাদের ক্লান্ত দেহটাকেও উপরে নিয়ে যাচ্ছিল। পাহাড়ের মাঝ পথে আমরা একবার বিশ্রাম নিলাম, পাহাড়ের বিভিন্ন যায়গায় ছোট ছোট মাচার মতো আছে যেখানে পাহাড়ের উপরে বসবাসকারীরা নানান জিনিস বিক্রি করেন পর্যটকদের উদ্দেশ্যে। 

যেহেতু যায়গাটা একটা হিন্দু পাড়া, সেখানে অনেক মন্দির ছিল, চন্দ্রনাথ পাহাড়ের মন্দিরগুলো বেশ পুরনো। আমরা এসব দেখতে দেখতে এবং পাহাড়ের থেকে চারিদিকের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে উপরের দিক অগ্রসর হলাম। 

যখন আমরা শিখরে পৌঁছলাম, উপর থেকে নিচে সবকিছুই যেন অনেকটা ছোট লাগছিল,আম্মুর কাছে লিলিপুটের গল্প শুনেছিলাম, উপর থেকে নিচে তাকানোর সময় সারা চট্টগ্রাম শহরটাকে যেন লিলিপুটের শহর লাগছিল। 

মেঘ ধরা যায় না,তবে খুব কাছ থেকে মেঘ দেখেছি। পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে সেই চন্দ্রনাথ মন্দির যা দিয়ে পাহাড়ের নামকরণ। পাহাড়ের মাঝে ছোট্ট একটা ঝর্ণা আছে, বৃষ্টি হলে দেখানে পানি পাওয়া যায়।

সময়ের হিসেবে আমাদের হেঁটে উঠতে দেড় ঘণ্টার মতো লেগেছিল, শরীর খুব ক্লান্ত ছিল, কিন্ত আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন সেই ক্লান্তিকে হার মানিয়েছিল। 

পাহাড়ের উপর থেকে সাগরের নীল জলরাশি ছিল সবচেয়ে সুন্দর। পাহাড়ের সাথে সাগরও দেখা হয়ে গেল।

পাহাড় থেকে নামার পথে ইকোপার্ক নামের একটি পার্ক আছে। সেখানে দুই তিনটি ঝর্না আছে। সহস্রধারা ঝর্নায় যাওয়ার আগে স্থানীয় বিজিবি থেকে অনুমতি নিয়ে যেতে হয়, আমরা অনুমতি নিয়ে আবার ৪৮৩ সিড়ি নিচে নেমে গেলাম।

ঝর্ণায় গোসল করে, আমাদের উদ্দেশ্য হলো বাঁশবাড়িয়া সি বিচ যাওয়া। চলে গেলাম সেখানে। আমাদের প্রথম সমুদ্র, দেখা চোখের সামনে নীল জলরাশি। 

আকাশ তখন পরিষ্কার ছিল, কিন্ত তখনই ফণির প্রভাবে আকাশ কালো হয়ে যায়। মুহুর্তে আকাশ যে ঠিক কতটা রঙ বদলাতে পারে, সমুদ্র কতটা ভয়ানক হতে পারে তা দেখলাম। 

আমাদের সবাইকে সমুদ্র থেকে দুরে সরে যেতে বলা হল, আমরাও গেলাম। ঝড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টি শুরু হলো। আমরাও আর কিছুক্ষণ চট্টগ্রামে অবস্থান করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম...

একদিনের জন্য আমাদের কাছে সবচেয়ে সেরা একটি ট্যুর মনে হয়েছে। কী নেই পাহাড়, সমুদ্র, ঝর্ণা আর সবশেষে প্রশান্তি। 

সীতাকুণ্ড একটি সবুজ শহর। চারিদিকে গাছ, পাহাড় আর ঝর্ণা। আবার আসব, সুযোগ হলে এই শহরে। 

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com