মা যখন শিশু

যখন কেবল স্বপ্নগুলো একটু একটু করে জড়ো হতে শুরু করে ঠিক তখনই অনেক শিশু কিশোরীর জীবনে কালবৈশাখীর ঝড়ের মতোই আসে 'বিয়ে'।
মা যখন শিশু

আমাদের দেশে বাল্যবিয়ের প্রবণতা অনেক বেশি এবং এর প্রভাবও ভয়াবহ।যে বয়সে একটা শিশুর স্কুলে যাওয়ার কথা ঠিক সেসময় অনেক পরিবারেই নেওয়া হয় শিশুটিকে বিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ১২-১৬বছরের শিশু কিশোরীরাই হচ্ছে বাল্যবিয়ের শিকার।অনেক পরিবারই সেটা করছে বাল্যবিয়ের ভয়াবহ পরিণতি জেনে-বুঝে বা মোহে।যদিও অনেকসময় পরিবারের সদস্যরা এর পেছনের কারণ হিসেবে মেয়েদের সামাজিক নিরাপত্তাকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বাল্যবিয়ে কখনোই মেয়েদের নিরাপত্তা তো দিতে পারেই না বরং তাদের জীবনযাত্রাকে করে বিঘ্নিত, ফেলে দেয় জীবননাশের সংশয়ে।

একজন শিশু বা কিশোরী কখনোই শারীরিক বা মানসিকভাবে বিয়ের জন্যে প্রস্তুত থাকে না। অপ্রাপ্তবয়সে বিয়ে সৃষ্টি করে নানা সামাজিক ও শারীরিক সমস্যাও। অপ্রাপ্তবয়সে গর্ভধারণ, অপুষ্টিসহ শিশুর পরিচর্যাতেও সৃষ্টি হয় নানা সমস্যা। একজন শিশু বা কিশোরী যখন নিজেরই পরিপূর্ণ খেয়াল রাখার সক্ষমতা অর্জন করে না ঠিক তখনই বাল্যবিবাহের কারণে আরেকটি শিশুর পরিচর্যার দায়িত্ব নিতে হয় তাকে।

একজন শিশু বা কিশোরী মা কখনোই তার বাচ্চাটির পরিপূর্ণ পরিচর্যা নিতে সক্ষম হয় না। ফলে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেসব বাচ্চারা অপুষ্টিতে ভোগে বা অনেকক্ষেত্রে সেসব শিশুদের প্রাণও সংশয়ের মধ্যে পড়ে।

এক্ষেত্রে বাল্যবিয়ের শিকার শিশু বা কিশোরীটির শিশু পরিচর্যা সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব এবং মানসিক কারণও কাজ করে। একজন শিশু বা কিশোরী মার মানসিক অবস্থা বেশিরভাগক্ষেত্রেই একটি বাচ্চার পরিপূর্ণ দায়িত্ব নেওয়ার জন্যে পরিপক্ব বা প্রস্তুত থাকে না। এরফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা তাদের শিশুর প্রতি থাকে উদাসীন। এই উদাসীনতা বা অপরিপক্বতা অনেকক্ষেত্রেই নবজন্মানো শিশুর জীবনাশের কারণও হয়ে দাঁড়ায়।

বেশিরভাগক্ষেত্রেই বাল্যবিবাহের ফলে প্রসবকালীন সময়েই অনেক কিশোরী মায়ের মৃত্যু হয় বা প্রসবের পরিবর্তী সময়ে ভোগে নানা জটিল শারীরিক সমস্যায় যা অনেক সময়ে মানসিক সমস্যারও জন্ম দেয়। বাল্যবিবাহের শিকার মায়েরা পরবর্তীতে শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপারেও তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না।

বাল্যবিবাহ কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না বরং হয়ে থাকে সমস্যার সৃষ্টির সূচনা। বাল্যবিবাহ কোনো শিশু বা কিশোরীর সামাজিক নিরাপত্তা তো দেয়ই না বরং তাদের জীবনকে আরো ফেলে দেয় হুমকির মুখে।

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে শুধু সরকারি আইন বা ব্যবস্থা অনেকক্ষেত্রেই কোনো কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে না যদি না আমরা সচেতন হই। শুধু নিজ পরিবারের মধ্যে নয় আশেপাশে কোথাও বাল্যবিয়ে হলে আমাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত বা নেওয়া উচিত আইনের সাহায্য। আমাদের একটা ছোট পদক্ষেপই হয়তো বাঁচিয়ে দেবে একটি শিশু-কিশোরী বা ভবিষ্যৎতে আগত শিশুর জীবন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com