ছোট থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মঞ্চে পারফর্ম করতাম। সকলের হাত তালি ও প্রশংসা আমার আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিত।
নবম শ্রেণিতে থাকাকালীন একবার বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বের হয়েছিলাম। সেখানে দুষ্টুমির চলে বন্ধুরা মিলে একটা নাটিকা করেছিলাম। সে বছর ওই নাটিকা উপজেলা স্কাউট সমাবেশে তাবু জলসায় নিজ সাব ক্যাম্প থেকে তৃতীয় স্থান অধিকার করে।
এসব আমার উদ্দিপনা আরও বাড়িয়ে দেয়। ইচ্ছা জাগে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের। যেই ভাব সেই কাজ। কয়েকদিনের মধ্যেই লিখে ফেলি একটা স্ক্রিপ্ট। কিন্তু কীভাবে নির্মাণ করব? এ সম্পর্কে তো আমার কোনো ধারণাই নেই। নেই কোনো ক্যামেরা বা ভালো ফোন। পরিচিত অনেকের সাহায্য চাইলাম কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হতে হয়েছে। এভাবে এসএসসি পরীক্ষাও চলে আসায় ইচ্ছাটাকে মাটি চাপা দিতে হলো।
পরীক্ষা শেষে ভর্তি হলাম কলেজে কিন্তু সেই স্বপ্নটা বারবার পীড়া দিত। কলেজে এসে পরিচয় হলো রাফির সাথে। সে খুব ভালো ছবি তোলে। একসময় বন্ধু রাফির কাছে ক্যামরার চাইলাম। সে রাজি হলো। তারপর চটপট আবার একটা স্ক্রিপ্ট তৈরি করে ফেললাম। এখন সমস্যা হলো স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য কী কী লাগে? কীভাবে ভিডিও করে? এসব তো জানি না। আর অভিনয়ের জন্য মানুষ কোথায় পাব? এসব ভাবতে থাকি কিন্তু ইচ্ছাশক্তির কাছে এসব কিছুই না। দিন তারিখ ঠিক করে কাজে নেমে পড়লাম। অনেক খুঁজে অভিনয়ের জন্য পেয়ে যাই ইমাম নামের এক পথশিশুকে।
প্রথমদিন শ্যুটিং ভালো ভাবেই শেষ হলো, পরের দিন থেকে শুরু হলো বিপত্তি। কেননা বন্ধু রাফি আর সময় দিতে পারবে না। এখন ক্যামেরা পাব কোথায়? এক বড় ভাইকে বলে রাজি করিয়ে তার মোবাইল দিয়ে বাকি শ্যুট শেষ করি। বাকি থাকে শুধু সম্পাদনা।
এটাই বা কীভাবে করবে? এতটুকু এসে সব কি বিফলে যাবে? তা কীভাবে হয়। ইউটিউব ঘেঁটে দেখে নিলাম বেশ কয়েকটা ভিডিও। আর ডাউনলোড করে নিলাম একটি ভিডিও এডিট করার এপ। সে সময় এগিয়ে আসে সাব্বির ভাইয়া ও সোহেল ভাইয়া। তারা দেখিয়ে দেন এপটা কীভাবে ব্যবহার করতে হবে।
সম্পাদনার শেষ করার মধ্য দিয়ে শেষ হলো এতদিনের লালিত স্বপ্ন পথশিশুর শিক্ষার অধিকার নিয়ে নির্মিত আমার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। এর নামও দিলাম 'স্বপ্ন'।
একদিন বন্ধু সাকিব আমার কাছে ভিডিওটি খুঁজল। তাকে দিলাম। সে আমাকে না জানিয়ে মার্চে অনুষ্ঠিত SPF ফেস্টিভ্যালে পাঠিয়ে দিল। ২৮ অগাস্ট এর প্রদর্শনী ছিল। কিন্তু সে সময় কলেজের মাসিক পরীক্ষা চলার কারণে যাওয়া হয়ে ওঠেনি।
মনটা খারাপ হয়ে গেল এই ভেবে যে নিজের প্রথম কাজের প্রদর্শনী হচ্ছে অথচ নিজে দেখতে পারলাম না। ২৯তারিখ জানানো হলো আমার ভিডিওটি বিচারকদের ভোটে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। শুনে সত্যিই অবাক হয়েছি সাথে খুশিও। পরক্ষণে অতিথির হাত হতে পুরস্কার নিতে পারিনি বলেই মন খারাপ হয়ে গেল।
এর মাঝে তৃতীয় স্থান অধিকারের কথা প্রায় সকলেই জেনে যায়। সাকিব একসময় বিষয়টি শ্রেণি শিক্ষককে জানাতে বলে। তার জোরাজুরিতে বাংলা অধ্যাপক সুফিয়া সুলতানা তন্নি ম্যামকে আমাদের প্রাপ্তির কথা জানাই। তিনি খুশি হোন এবং প্রিন্সিপাল স্যারকে তা জানান।
আমার ধারণা ছিল স্যার তা শুনে প্রচণ্ড ক্ষেপে যাবেন। বলবেন, পড়ালেখা বাদ দিয়ে এসব কী করেছি।
কিন্তু সব ধারণা ভুল করে দিয়ে স্যার আমাদের অভিন্দন জানান এবং সমাবেশে সবার সামনে আমাদের পুরস্কারগুলো তুলে দেন। সেই সঙ্গে একটি বইও উপহার দেন তিনি। আর সঙ্গে বাহবা তো ছিলই।