আমার বাবার মুখ থেকে শোনা ১৮৮৬ সালে ব্রিটিশ সরকার এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত করে। আমার বাবার একটাই আফসোস ছিল যে তিনি ভালো ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও এই বিদ্যালয়ে পড়তে পারেননি।
বাবা থাকতেন গ্রামে। এই স্কুলটা ছিল আমাদের গ্রাম থেকে অনেক দূরে। বাবা শহরে এলে সেই এই স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখতেন ভেতরে কী পড়ানো হচ্ছে? একবার সপ্তম শ্রেণির ক্লাসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছিলেন কী পড়ানো হচ্ছে? গ্রামের একজন ছেলে ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে ক্লাসের পড়া দেখছে দেখে শেষের বেঞ্চের কিছু ছাত্র আমার বাবাকে ভেংচি কাটে। বাবা তো ছোট ছিলেন, নিশ্চয়ই তার মনে কষ্ট লেগেছিল।
যাহোক এই ঘটনা বলার পর বাবা আমাকে বলেন, "আমি যেন দেখি আমার ছেলে ফেনী পাইলট স্কুলে পড়ে।”
পিইসি পরীক্ষা শেষ। শুরু হলো পাইলট স্কুলে ভর্তির মহা যুদ্ধ। পিইসি পরীক্ষা শেষ না হতেই আমাকে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয় পাইলট হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক শাহাজাহান সিরাজ মজুমদার স্যারের কাছে।
সেই ভোর ৫টায় সময় ঘুম থেকে উঠে প্রাইভেটের জন্য রওনা দিতে হয়। এত ভোরে কী ঘুম থেকে ওঠা যায়?
প্রাইভেট থেকে আসতাম সকাল ৭টায়। এসে আবার টেবিলে একটানা সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পড়া!
বিশ্রাম, খাওয়া - দাওয়া, গোসল করা শেষ করে আম্মু আবার ৩টায় টেবিলে নিয়ে বসতেন। শেষ হতো বিকেল ৫টায়।
আবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলত আমার যুদ্ধ। মাঝে খাবারের জন্যে একবার বিরতি পেতাম। এক কথায় স্টিম রোলার চলত।
পড়াশোনা করতে করতে মাঝে মাঝে আমি ফ্লোরে গড়াগড়ি দিতাম। তবুও মাফ নেই, পড়া মিস নেই।
তারপর এলো মাহেন্দ্রক্ষণ। ২০ডিসেম্বর ২০১৫। ভর্তি পরীক্ষার দিন। পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রবেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যে পরিদর্শক এসে সবাইকে খাতা ও প্রশ্ন দেন। প্রশ্ন পাওয়ার পর আহ্ কী আনন্দ। দেখলাম যে সব প্রশ্নর উত্তর আমার জানা।
অবশেষে ২৩ ডিসেম্বর রাত ৩টায়। ভর্তির রেজাল্ট দিল। দেখলাম যে আমি সফলতার সহীত পরীক্ষায় ১৫৬ হয়েছি। খবরটা পেলাম ফোনে। কারণ আমি ছিলাম নানু বাড়িতে।
অক্লান্ত পরিশ্রমের পর স্বপ্নের পাইলটে ভর্তি হতে পেরে আমি গর্বিত।