একজন সাদা মনের মানুষের গল্প
তার জম্ম ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৫৭ সালে ফেনীর ফুলগাজী থানার পূর্ব নীলখি গ্রামে। বেড়ে ওঠা সেখানেই। ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল ১৩-১৪ বছর, তখনই জড়িয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। পাক সেনাদের ক্যাম্পে কাজ করার ছলে তাদের বিপদে ফেলাই ছিল তার কাজ। এসব কাজে আরও কয়েক জন ছিল তার সঙ্গে।
তিনি বলেন, ছোট থাকায় পাক সেনারা তাদের জঙ্গল পরিষ্কার করাত আমাদের দিয়ে। সে সময় লুকিয়ে সেখানে মাইন পুঁতে দিতাম। একবার পাক সেনারা আমাদের বলল পুকুরের কোন দিকে পানি কম তা দেখিয়ে দিতে। আমরা বুদ্ধি করে যে দিকে পানি বেশি সেদিকে দেখিয়ে দিলাম। তারা চার জন একসাথে নামতেই পানিতে ডুবে গেল। পাড়ে ওঠার জন্য হাত পা ছোড়াছুড়ি করা দেখে আমরা দিলাম দৌড়।
যুদ্ধ চলাকালীন ইন্ডিয়াতে সাত দিনের গেরিলা ট্রেনিং এ অংশ নেন তিনি।
তিনি একজন মনোযোগী ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি। অজপাড়া গাঁয়ের বিদ্যালয়ে থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্টবিজ্ঞান থেকে স্নাতোকত্তর শেষে সাচিবক বিদ্যা বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ। বেশ কিছু দিন শিক্ষাগতা করার পর ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম ক্যান্টমেট পাবলিক কলেজে সাচিবিক বিদ্যা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরবতীর্তে সাচিবিক বিদ্যা বিভাগের প্রদর্শক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন ।
১৯৯৪ সালে জড়িয়ে পড়েন বিশ্বব্যাপী যুব আন্দোলনে, বাংলাদেশ স্কাউটে। ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম ক্যান্টরমেন্ট পাবলিক কলেজে প্রতিষ্ঠা করেন চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ স্কাউট দল (সিসিপিসি রোভার দল)। ২০০০ সালে গঠন করেন চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট গার্ল ইন স্কাউট দল।
বর্তমানে তিনি সিসিপিসি স্কাউট দলের ইউনিট লিডার হিসেবে রয়েছেন। তিনি স্কাউট জীবনে অর্জন করেছেন বিরল সম্মননা। গত ২০ মার্চ জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে থানা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ রোভার শিক্ষক নির্বাচিত হন। এ ছাড়াও বেশ কয়েকবার জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ রোভার শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। সর্বশেষ ২৬ এপ্রিল স্কাউট আন্দোলনে ও যুব আন্দোলন সম্পসারণের দীর্ঘ অবদান রাখায় বাংলাদেশ স্কাউট লং সার্ভিস এওয়ার্ড পান। ২৬ এপ্রিল সার্কিট হাউজে মাননীয় জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) দেলোয়ার হোসেনের কাছ থেকে তিনি পদক নেন।
স্কাউটের জড়ানোর কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘সমাজসেবা। আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে সমাজের জন্য কিছু করতে হবে। আমাদের সকলের কাছে সেবার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।‘
শুনেছি স্যার নিজের বেতন থেকে যা পারেন তা দিয়েই হতদরিদ্রের পাশে দাঁড়ান। এই মে মাসেই তিনি সুবিধা বঞ্চিত শিশুরা যেন বিপদগামী না হয় সেজন্যে তাদের নিয়ে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করেন। খেলা শেষে সবাইকে আবার উপহার দেন।
কর্মজীবনের প্রায় শেষ পর্যায়ে, শেষ বেলায় নিজেকে কোন জায়গায় দেখতে চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি চাই সবসময় যেখানে আছি সেখানেই যেন থাকি। এখান থেকেই যেন মানুষের জন্য কিছু করতে পারি। যতদিন বাঁচব মানুষের সেবা করব।‘