সাপের সঙ্গে বেড়ে ওঠা শিশুরা

সাপের খেলা দেখছিলাম। যিনি সাপের খেলা দেখাচ্ছিলেন তার সাথে একটা ছোট ছেলে ছিল।
সাপের সঙ্গে বেড়ে ওঠা শিশুরা

সাপের বক্সের পাশে বসেছিল ছেলেটি। কিছুক্ষণ পর ছেলেটার গলায় সাপ জড়িয়ে দেয় লোকটা। ছেলেটার চোখে কোনো বিস্ময় নেই, নেই ভাবলেশ, ভয়। এটাই ওদের নিত্যদিনের কাজ। ওদের জীবন।

হ্যাঁ বলছিলাম বেদে সম্প্রদায়ের কথা। যাযাবরের জীবন যাদের। কখনও নৌকায় করে জলে আবার কখনও ফাঁকা মাঠে দলবেঁধে স্থলে বসবাস করে।

যদিও এখন সব বেদে পরিবার এই অবস্থায় নেই। সাধারণত প্রত্যেক বেদে পরিবারের নিজস্ব নৌকা থাকে। বাংলাদেশে প্রায় ৮ লক্ষ বেদের বসবাস। বেদেদের এদেশে আসা নিয়ে রয়েছে নানা মতভেদ।

ধারণা করা হয়, ১৬৩৮ সালে আরাকান রাজা রাজ বাল্লালের সাথে এসেছে। এছাড়াও অনেক ধারণা প্রচলিত আছে। বর্তমানে সাভার, গাজীপুর, জয়দেবপুর, মানিকগঞ্জ, চৌদ্দগ্রামসহ অন্যান্য জায়গায় বেদেদের আবাস রয়েছে। বেদেরা গোত্রীয় বৈশিষ্টের। একারণেই হয়ত এখনো এরা টিকে আছে। তবুও নানা সমস্যা অভাবে জর্জরিত তারা।

তবে আমার মনে হয় বেদে শিশুদের কষ্টই যেন বেশি। বেদেদের সাধারণত কেউ কাজ দিতে চায় না। এছাড়াও তারা নিজেদের পেশা সাপ বিক্রি, সাপের খেলা দেখানো, মহিলারা হাতুড়ে চিকিৎসা করে জীবন চালায়। অন্য কাজ করতে চায় না তারা।

এতে তাদের মৌলিক চাহিদা অপূর্ণ থেক যাচ্ছে। এতে বেদে শিশুরা পাচ্ছে না পুষ্টিকর খাবার, শিক্ষা বা বিনোদন।

আমি নিশ্চিত এই শিশুদের মেডিকেল টেস্ট করা হলে দেখা যাবে এরা কতটা অপুষ্টিতে ভুগছে।

খেলা দেখার সময় বারবার শিশুটির দিকে তাকাচ্ছিলাম আর মনে হচ্ছিল, আচ্ছা, ও বড় হয়ে অনেক বড় জীববিজ্ঞানী হতে পারত, সারাদিন ল্যাবে পড়ে থাকত বিভিন্ন সাপের বংশগতি নিয়ে। হতে পারত অনেক বড় ক্রিকেটার। সাকিব আল হাসানের মতো বিশ্ব সেরা। কিন্তু এসবের কিছুই হয়নি।

অনাহারে অর্ধাহারে তাদের জীবন কাটছে। তারা অবজ্ঞার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শিক্ষা, বাসস্থান, পরিমিত খাদ্যের সাথে পাচ্ছে না সঠিক চিকিৎসার সুযোগও।

বেদে শিশুদের এ অবস্থা থেকে উত্তরণ দরকার। এসব শিশুদের দিতে হবে শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা।

আমরা চাই পৃথিবীর সব শিশু শান্তিতে থাকুক। নিশ্চিত হোক ওদের মৌলিক অধিকার।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com