সর্ষেতেই ভূত তবে!

সর্ষেতেই ভূত তবে!

বেশ কয়েকদিন আগের কথা। পুরান ঢাকায় গিয়েছিলাম বাবার সঙ্গে একটা কাজে। পিকাপে করে আসছিলাম।

আমাদের পিকআপ বাবু বাজার, নয়া বাজার, শ্যাম বাজার পার হয়ে যখন পোস্তগোলা ব্রিজের নিচ আসছল, দেখলাম পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে।

তারা হাত তুলে ইশারায় রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে দিল। একজন এগিয়ে এসে বললেন, গাড়ির লাইসেন্স দেখাতে, চালক গাড়ির লাইসেন্স দেখালেন তবুও তারা গাড়ি সাইড করতে বললেন।

চালক স্বগতোক্তি করলেন, “টাকা ছাড়া গাড়ি ছাড়বে না এখন।”

দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে বাবা বললেন, “কত টাকা দেওয়া লাগবে? বল দিয়ে দেই।”

এরপর গাড়ির চালকের হাতে বাবা ১০০ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিলেন। এরপর পুলিশ আংকেলকে গাড়ির চালক হাতের ইশারা করতেই উনি সামনে এসে টাকাটা নিয়ে বিনাবাক্য ব্যয়ে চলে গেলেন। জীবনে প্রথমবার নিজের চোখের সামনে এমন দুর্নীতি দেখে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।

চালক আংকেল গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলা শুরু করলেন, “এখন যদি আপনি এই টাকাটা না দিতেন ওরা একটা মামলা দিয়ে রাখতেন। গাড়ির সমস্যা থাক আর না থাক মামলা দিয়ে রাখতেন।

“টাকা দেবেন গাড়ি ছেড়ে দেবে,-” উনি বিরক্তি নিয়ে বলে চললেন।

আমার মনে হচ্ছে এগুলো রোজকার ঘটনা। রাস্তায় সাধারণ মানুষের চোখ এড়িয়ে যায় এসব। আর ভুক্তভোগীরাও এসব মুখ বুজে সহ্য করে যায়। কারণ জীবন তো চালাতে হবে, গাড়ি থেমে থাকলে পেটটা চলবে কীভাবে?

আমি সেদিন চালক আংকেলকে জিজ্ঞেস করলাম, এই টাকা কি পুলিশ একা নেবে?

উনি উত্তরে বললেন, এই টাকার অনেক ভাগ হয়। তবে বড় ভাগটা পুলিশ পান।

কিছুদূর যেতেই রায়েরবাজার। সেখানে আরেকটা চেকপোস্ট পড়ল। বাবা এখানেও টাকা দিলেন।

বাবাকে বললাম, “কিছু বল। এখানে কী এই নিয়মই চালু আছে? প্রতিবাদ করো।”

বাবা বললেন, “হুম জীবন এখানে এভাবেই চলে।”

বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, “এটা কি প্রশাসন দেখে না?”

বাবা শুধু বললেন, “সর্ষেতেই ভূত থাকে যদি?”

বাবার কথা বুঝতে তো বাকি রইলো না। আমার মনে হলো যারা দেশকে শান্তি শৃঙ্খলার মধ্যে রাখবে, যারা দেশকে দুর্নীতি থেকে মুক্ত রাখবে তারাই সাধারণ মানুষকে হয়রানী করাচ্ছে।

আগে ভাবতাম এত এত আইন, আদালত দেশে তবুও চারদিকে কেন এত অস্থিরতা। শুধু মাত্র আইন যাদের হাতে তারাই রক্ষ করতে পারছেন না আইন। এটা দুঃখের, এটা হতাশার।

Related Stories

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com