ট্রেন যাত্রায় জাদুর শহর ঢাকায়

আমি এর আগেও একবার ঢাকায় গিয়েছি। সেটা ছিল বাস যাত্রা। এবার ভিন্ন পথে ঢাকায় যাব। আমার ভেতরে উত্তেজনা কাজ করছে,যদি বিপদে পড়ে বাস ছেড়ে ট্রেনে যাচ্ছি। কারণ তখন পরিবহন শ্রমিক মালিকরা সাত দফা দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন।
ট্রেন যাত্রায় জাদুর শহর ঢাকায়

ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড অফিসে আমার পরীক্ষার সনদ পত্র সংশোধনী মিটিং ছিল। সারাদেশে তখন বাস চলাচল বন্ধ। কীভাবে সকালে ঢাকা পৌঁছাব ভাবতেই ট্রেনের কথা বললেন আমার স্কুলের শিক্ষক মমতাজ ম্যাডাম, মায়া ম্যাডাম বলেই ডাকি সবাই। আগের দিন সন্ধ্যায় আমার বাড়ি থেকে টাঙ্গাইল শহরে ম্যাডামের বাসায় উঠি।

ধর্মঘটের জন্য দশ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দিতে হয়েছিল৷ সে আরেক দুঃখ! রাতে ম্যাডামের বাসায় থেকে খুব সকালে রওনা হলাম স্টেশনের দিকে। সেখানে গিয়ে বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিলাম। এবার ট্রেনের জন্য অপেক্ষা। সড়কে ধর্মঘটের জন্য অনেকেই রেলপথ বেছে নিয়েছেন গন্তব্যে পৌঁছাতে। তাই শত মানুষের ভিড় টাঙ্গাইল রেলস্টেশনে।

"এত মানুষের মাঝে আমরা কি ট্রেনে ওঠতে পারব রে নাসির..! ম্যাডামের হতাশা মাখা কথায় বুকে কাঁপুনি তুলে দিল। উত্তরে বললাম আল্লাহ ভরসা চিন্তা কইরেন না ঠিকই ওঠে পড়ব ম্যাডাম।

প্রথমে আসল একতা এক্সপ্রেস, ভেতর কী বাহির এমনকি ছাদেও তিল ধারণের জায়গা নেই,বহু চেষ্টা চালিয়েও ভেতরে ঢুকতে পারলাম না।

এরপর যথারীতি সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস স্টেশনে থামল আর মানুষের যুদ্ধ শুরু হল ওঠার। নারী কিংবা শিশু দেখার অবকাশ কারো নেই। মনে হচ্ছে জীবন দিয়ে দিবে ট্রেনে উঠবার জন্য। আগে ম্যাডামকে পরে আমি ট্রেনে ওঠলাম তবে সিট পাইনি। ট্রেনে প্রচুর ভিড়। আমাদের মতো অনেকে কোনমতে দাঁড়িয়ে আছে। সবার গন্তব্য ঢাকা।

অবশেষ টাঙ্গাইল থেকে ট্রেন সর্পিল গতিতে ছুটতে শুরু করল ঢাকার দিকে। সবুজ মাঠের আঁকা বাঁকা রাস্তা দিয়ে। ট্রেনের জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছি মাঠের পাকা ধান বাতাসে নড়ছে আবার কোথাও ধান কাটছে কৃষক।

অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতে ঘণ্টা দুইয়ের মধ্যে পৌঁছে গেলাম কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। কী বিশাল রেলওয়ে স্টেশন..! ঈদ এলেই টিভিতে দেখি আজ বাস্তবে দেখলাম। চোখ বন্ধ করতেই ভাবি বড় সাংবাদিক হলে মাইক্রোফোন হাতে ঈদের আগে এখানেই পড়ে থাকতে হবে রাত দিন।

এরপর রিকশা করে জাতীয় প্রেসক্লাব, শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, দোয়েল চত্বর, বায়তুল মোকারম মসজিদের সামনে দিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে পৌঁছে গেলাম। মিটিং শেষ করতে করতে দুপুর হয়ে গেল। ক্যান্টিনে হালকা খেয়ে নিয়ে টাঙ্গাইলের পথে রওয়না হলাম আবার।

আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল প্রেসক্লাবের সামনে একবার হাঁটি, শহীদ মিনারে গিয়ে একবার বসি কিন্তু সময়ের অভাবে কিছুই হয়নি। আফসোস হচ্ছিল, ইস কবে যে এই শহরে আসব, মাইক্রোফোন, বুম হাঁতে ছুটব এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com