ধর্ম নিয়ে নয়, ভাবুন মানুষ নিয়ে

আমাদের দেশ নাকি অসাম্প্রদায়িক দেশ! আসলেই কি তাই? তবে চারপাশের মানুষের বিভিন্ন চিন্তা ভাবনা দেখে আসলেই কথাটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।  
ধর্ম নিয়ে নয়, ভাবুন মানুষ নিয়ে

কিছু কিছু মানুষের যুক্তি, ব্যাখ্যা আসলেই ভাবতে বাধ্য করে যে আমরা কি অসাম্প্রদায়িক?

ধর্মান্ধ, ধর্মান্ধতা, নাস্তিক, আস্তিক শব্দগুলো এখন আমাদের কাছে খুব পরিচিত। সেই ছোট বয়সেই কঠিনতম শব্দের সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। ধর্মান্ধতা আগেও ছিল এখনো আছে। আবার কিছু মানুষ আছে যারা নিজেরা মুখে বলে মানব ধর্মে বিশ্বাসী বা নিজে নিজের ধর্মকে খুব শ্রদ্ধা করে, কিন্তু সেই অন্যের ধর্মকে কটাক্ষ করে কথা বলে। আবার এমনও আছে, সামনে বলে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা কিন্তু পেছনে ঠিকই অন্যের ধর্মকে কটাক্ষ করে কথা বলবে।

আমরা শিশুরা বড়দের অনুসরণ অনুকরণ করি, বড়দের থেকে শিখি, তাদের নির্দেশিত পথে চলি। তবে আমাদের বড়রাই যদি সাম্পদায়িক চেতনার হয়ে থাকেন তাহলে? আমরা কী শিখব তাদের থেকে।

আমাদের শিশুদের মনে হাজারও প্রশ্ন দানা বাঁধে দেশ, ধর্ম ও ধর্মীয় অনুশাসন নিয়ে। আসলে ধর্ম আলাদা করেই কি ভাবতে হবে আমাদের। না আমরা মানুষ মানুষে ঐক্য নিয়ে ভাবব?

একজন মানুষের প্রথম পরিচয় সে মানুষ। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে প্রথমে একজন মানুষ। আসলে অনেকে মানুষের ধর্ম দিয়ে তাকে বিবেচনা করে। কিন্তু এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়?

অনেকে বলতে পারে আমি শিশু হয়ে কেন সাম্প্রদায়িকতার মতো বড় বিষয় নিয়ে কথা বলছি। আসলে কি দেশটা আমার আপনার সবার! সে অধিকার থেকে বলছি। হ্যাঁ এটা সত্য আমার দেশ নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখি। মনের মধ্যে দেশের সব মানুষের সম্প্রীতির ছবি আঁকি।

আমি আমার নিজের একটা ছোট গল্প বলি। খুব ছোটবেলায় ক্লাসে দেখতাম অন্য ধর্মের সহপাঠীদের সঙ্গে ক্লাসের কেউ মিশছে না, কথা বলছে না। এমনকি ক্লাসে কেউ তাদের টিফিনের খাবার ভাগাভাগিও করে খেত না। তার কারণ তার ধর্ম অন্য।

মুসলমানরা বিশ্বাস করে নামাজ সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি, সনাতন ধর্মাবলম্বী বিশ্বাস করে সন্তুষ্টির জন্য পূজা দেয়। এই তো। শুধু পথ, পদ্ধতি আলাদা। তাহলে কেন তাদের আমরা আলাদা করছি নিজেদের থেকে? তারাও তো মানুষ। সেই প্রথম শ্রেণি থেকে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব আমার। দশম শ্রেণি অব্দি এক সঙ্গেই পড়েছি। কই কখনো তো আমার মধ্যে কোনো দ্বিধা কাজ করেনি বরং আমরা ভালো বন্ধু হয়ে এখনও আছি।

নাম না উল্লেখ করি, আমি আমার এক আন্টিকে বলতে শুনেছি তিনি তার ছেলেকে বলছিলেন, তুমি আর সৌরভের সঙ্গে মিশবে না। ও তো অন্য ধর্মের, তার সঙ্গে মিশলে আল্লাহ তোমায় পাপ দিবে। আসলেই কি তাই? আমরা কি তাহলে বড়দের থেকে ভুল শিখছি?

কোথাও না কোথাও আমি, আপনি, আমাদের পরিবার, আপনারাই এই সরল মনে কালি ঢোকাচ্ছেন তাদের শেখাচ্ছেন ধর্মটা জরুরি।  

তথাকথিক ধার্মিক মানুষের চিন্তাভাবনা দেখলে খুব অবাক লাগে। কারণ তারা তাদের যুক্তি ব্যাখ্যার মাধ্যমে মানুষকে ঘায়েল করে কেননা আমরা ধর্মের ব্যাপারে ভীত। তারা এক শ্রেণির মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে ধর্মান্ধতা তৈরি করছে। তার মাঝে আমরা শিশুরাও বাদ থাকছি না। আমাদের ছোট খাটো ভুলের মধ্যেও ধর্মকে টেনে আনা হয়। ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা এক জিনিস আর ধর্মান্ধতা আরেক জিনিস। আমরা ধর্মান্ধতার মধ্যে বিরাজ করছি না তো?

তারা যদি আমাদের সাম্প্রদায়িকতা না শিখিয়ে মনুষ্যত্ব শেখাত তাহলে আমার মনে হয় আমাদের মধ্যে সমতা চলে আসত।  

রক্ত মাংসে গড়া সেও মানুষ, আমিও মানুষ তাহলে তফাৎটা কোথায়? আমরা সব মানুষ একই প্রজাতি তাহলে কেন আমাদের আলাদা করে দেওয়া হয়, কেন আমাদের মধ্যে একটা প্রাচীর টেনে দেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত?

আচ্ছা আজ যদি আমার কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার এক অন্য সম্প্রদায়ের বন্ধু যদি তার রক্ত দিয়ে আমার প্রাণ বাঁচায় তাহলে কি আমার জাত যাবে? অন্য সম্প্রদায়ের বন্ধুর সাথে যদি তাদের উৎসবে অংশ নিই তাহলে কি আমার জাত যাবে?

আমরা কী শিখছি আর আমাদের কোমলমতি ভাইবোনদের কী শেখাচ্ছি বুঝতে পারছেন? আমরা বা আমাদের পরের প্রজন্মে শিশুরা কি শুধু বিদ্বেষ আর রেষারেষি শিখবে? আর ধর্ম বর্ণে সহিংসতা?

সাম্প্রদায়িকতা মানুষকে বিদ্বেষ শেখায় আর অসাম্প্রদায়িকতা মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। তুমি হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এই পরিচয়ের চেয়ে তুমি একজন মানুষ, এটা হোক প্রথম পরিচয়।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com