পিছিয়ে থাকা কামরানেরা সুযোগ পাবে কি?

আমরা প্রায়ই একটি কথা শুনে থাকি। সেটা হলো আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশু আমাদের স্বপ্ন।
পিছিয়ে থাকা কামরানেরা সুযোগ পাবে কি?

আজ যারা শিশু তারা একদিন বড় হবে। বড় হবে শুধু বয়সে নয়  জ্ঞানে, গরিমায়, বিদ্যায়-বুদ্ধিতে।

তারপর তারা গ্রহণ করবে সমাজ আর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব। তাই আজকের শিশুকে গড়ে তুলতে হবে দেশ ও সমাজ পরিচালনার উপযোগী করে। কারণ ভবিষ্যতে তারা কেউ হবে বিজ্ঞানী, কেউ শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক কেউবা ইঞ্জিনিয়ার, রাষ্ট্র নেতা, ক্ষেতে ফসল ফলাবে কেউ, কারো দক্ষ হাতে ঘুরবে কল-কারখানার চাকা। তাহলে? কী দাঁড়াল? দেশটা তো শিশুরাই চালাবে। তাই না?

যে সুন্দর শিশুটি আজ জন্মগ্রহণ করল তাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখে বাবা-মা, স্বপ্ন দেখে পরিবারের প্রতিটি  সদস্য। শিশুটি একদিন বড় হয়ে শুধু মা-বাবা নয় সমাজ ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে তার প্রতিভা এবং কর্ম শক্তি দ্বারা। সে উজ্জ্বল করবে আলোকিত করবে দেশের ভবিষ্যৎ। এত উজ্জ্বলতার মাঝেও একদল শিশু পিছিয়ে পড়ছে।

কামরানও এমন একজন শিশু। ওর বয়স ১২ বছর। সে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার পাঁচ নং সিলাম ইউনিয়নের রুস্তমপুর গ্রামে পরিবারের সঙ্গে বাস করে।

কামরানের বাবা একজন কাঠুরে। তার এক ভাই দুই বোন। কামরান একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তার বাবা কাঠ কেটে যা পয়সা পান তা দিয়ে কোনো রকম টেনে টোনে তাদের সংসার চলে যায়।

সে শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কামরান বলে, “আমার স্কুলে যেতে খুব ইচ্ছা করে। আমার সমবয়সী শিশুরা স্কুলে যায়। কিন্তু আমি চোখে দেখতে পারি না বলে স্কুলে যেতে পারি না।”

কামরানের বাবার সাথে তার শিক্ষার বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, “কামরানকে আমার পড়ানোর খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এই এলাকার মধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য লেখাপড়ার কোনো সুযোগ-সুবিধা না থাকায় তাকে পড়াতে পারছি না।”

দুঃখ জনক হলেও এটা সত্য যে, অত্র এলাকা তথা এই ইউনিয়নের মধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য লেখাপড়ার কোনো সুযোগ -সুবিধা নেই।

আমাদের দেশের সরকার শিক্ষা প্রসারে ব্যাপক সফলতা লাভ করা সত্ত্বেও আজও নিশ্চিত হয়নি কামরানের মতো বিশেষ চাহিদা  সম্পন্ন শিশুদের বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা। নেই কোনো সুযোগ-সুবিধা, বিনোদনের ব্যবস্থা।

শিক্ষা প্রতিটি মানুষের  জন্মগত অধিকার। অতএব দেশের প্রতিটি সন্তানকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা, শিক্ষার সমান সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

কেননা শিক্ষাই জাতীর মেরুদণ্ড। এই মেরুদণ্ড যদি ঘুনে ধরা থাকে, তাহলে জাতি কখনোই  মাথা তুলে দাঁড়াতে  পারবে না। কাজেই উন্নয়নের পূর্ব শর্ত দেশের প্রতিটি নাগরিকের শিক্ষা দান নিশ্চিত করা। আর এই কাজটি করতে হলে, সবার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য শিক্ষার পাশাপাশি বাড়তি কিছু সুযোগ -সুবিধা নিশ্চিত  করা। যদি আমরা সবাই তথা সমাজ রাষ্ট্র সবাই মিলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বাড়তি কিছু সুযোগ -সুবিধা দিতে পারি, তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিতে পারি তাহলে দেশের সবাই শিক্ষার সুযোগ -সুবিধা পাবে। দেশ হবে নিরক্ষর ও দারিদ্র মুক্ত।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com