ছোট্ট থেকেই শিক্ষকরা ছিলেন আমার পছন্দের মানুষ, হৃদয়ের মানুষ। স্যাররা যখন পড়া বোঝাতেন তখন বাসায় বসে যেসব পড়া কঠিন লাগতো তাও সহজ হয়ে যেত। তাদের কাছে ধনী আর গরিব শিক্ষার্থীর তফাৎ ছিল না।
আসলেই জীবনটা অনেক ছোট। দ্বিতীয় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় ভাবতাম কখন সপ্তম অষ্টম শ্রেণিতে উঠব। আর সপ্তম অষ্টম শ্রেণিতে উঠে ভাবতাম কবে স্কুল জীবন শেষ করব। স্কুল জীবন শেষে কলেজ জীবন শুরু। এই পর্যন্ত আসতে কত শিক্ষক উপরে ওঠার সিঁড়ি হয়েছেন আমার জীবনে তার হিসাব নেই।
কলেজে উঠে হারালাম আরেক প্রিয় শিক্ষককে। আমাদের কলেজ শেষ হয়নি কিন্তু স্যার চাকরি পরিবর্তন করায় আমাদের সঙ্গে তার যাত্রা শেষ হয়ে গেছে।
উনি আমার প্রিয় শিক্ষক রেদোয়ান স্যার। স্যার সব সময় বলতেন যা শিখবি মনোযোগ দিয়ে শিখবি। তোরা পারবি। ইচ্ছে থাকলে সব সম্ভব, তোরা নিজেদের উপরে আস্থা রাখবি। তোদের হাতেই নতুন কিছু সৃষ্টি হবে। স্যারের এই কথাগুলো আমার মনে খুব করে দাগ কেটে আছে।
স্যার ব্যস্ততার কারণে আপনি যেদিন ক্লান্ত শরীর নিয়েও মুখে হাসি ঝুলিয়ে রাখতেন তখন হয়তো আপনার ক্লান্তি বুঝতাম না বা হয়তো বুঝতাম। ওতোটা ক্লান্তি নিয়েও হোয়াইট বোর্ডে সার্কিট আঁকতেন। কষ্ট হলেও পড়া বুঝিয়ে দিতেন। স্যার এই সব মূহুর্তের ঋণ আমরা কিভাবে শোধ করবো? স্যার আমরা কত ভাবে ঋণী আপনার কাছে! যখন কোনো সমস্যা হতো পরামর্শ নেওয়ার জন্য আপনার রুমে চলে যেতাম। সমস্যার কথা মন দিয়ে শুনে সুন্দরভাবে সমাধানের পথ দেখিয়ে দিতেন।
আপনার উপদেশ মনে রেখে চলছি। আমাকে বলেছিলেন, আলাউদ্দীন জীবনে যদি কখনও বন্ধুদের আড্ডায় পরে কিংবা মনের ইচ্ছায় নিকোটিনের স্বাদ দেখতে ইচ্ছে করে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তোমার আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলবে, দেখবে ইচ্ছেটা মরে গেছে। পরিস্থিতির শিকার হয়ে যদি কোনো অন্যায় কখনও করেও ফেলো, সঙ্গে সঙ্গেই বাবা মাকে জানাবে।
আমি শিশু সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত জেনে স্যার এত খুশি হয়েছিলেন যা লিখে শেষ করা যাবে না। সেদিন উনি আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, “আলাউদ্দীন তুমি অনেক দূরে এগিয়ে যাও। অনেক বড় হও।” সত্যি স্যার আপনার কাছ থেকে পাওয়া এই দোয়া আমাকে অনুপ্রাণিত করে।
স্যার যখন ভুল করি, কোনো কাজে ব্যর্থ হই, নিজেকে তুচ্ছ মনে করি তখন ঐ চমৎকার শব্দটি কানে বাজে। স্যার আপনাকে অনেক মিস করব। সাথে ইমরান, শান্ত, সজল, শোয়াইবসহ আরো কয়েকজন বন্ধু মিলে আপনার রুমে গিয়ে নুডলস খাওয়াটাকেও।
স্যার আর আমাদের ক্লাস নেবেন না, ক্যাম্পাসে দেখা হবে না আপনার সঙ্গে, কলেজ মাঠে একত্রে ক্রিকেট খেলতে পারব না এটা মানতে পারছি না।
আপনি যেখানেই থাকুন আপনি ভালো থাকুন। স্যার আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন আমরা একেকজন আদর্শবান ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে পারি। আমরা সবাই ভালো মানুষ হতে পারি। দেশের সুনাগরিক হয়ে দেশকে উন্নয়নের দিকে ধাবিত করে দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে পারি।