ভালোবাসার বিতর্ক

বিতর্ক শব্দটির সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময়।
ভালোবাসার বিতর্ক

আমরা চার ভাই বোন একসাথেই একজন গৃহ শিক্ষকের কাছে পড়তাম। একদিন স্যার বললেন আগামীকাল তোমাদের মাঝে বিতর্ক প্রতিযোগিতা হবে। যে দল জয়ী হবে তাদের জন্য পুরস্কার আছে।

সেই প্রথম শুনলাম 'বিতর্ক' শব্দটি। জানার আগ্রহ হলো বিতর্ক কী? স্যার বললেন বিতর্কে দুইটা দল থাকবে। তোমাদের একটা বিষয় দিব, এই বিষয়টা নিয়ে একদল পক্ষে অন্য দল বিপক্ষে বলবে। বড় ভাইয়া বলে উঠল মানে দুই দল 'চুল টানাটানি’ আর 'ঝগড়া করবে তাই না স্যার? তা শুনে আমার বোনেরা হেসে উঠল। স্যার কিছু বললেন না শুধু হাসলেন।

আমার তো আরো আগ্রহ বেড়েছিল বিতর্ক কি জানার। তবে বিতর্ক মানে কি ঝগড়া? স্যার বলে দিলেন একজন সর্বোচ্চ দুই মিনিট করে সময় পাবে। দুই মিনিটে কিই বা বলা যাবে? আরো অনেক প্রশ্ন মনে উদয়ন হল। স্যার শুধু বললেন বলা শুরু করলে দুই মিনিটও বলতে পারবে না। তবে বিতর্ক কি খুব কঠিন?

স্যার দল নির্ধারণ করে দিলেন। বড় ভাইয়া তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। ওর সাথে আমি ঝগড়া করে পারব? আমার দলে আমি ও আমার খালাত বোন দুইজনই খুব ছোট, তবে? এসব নানা ভাবনায় আমার দিন কাটতে লাগল।

তারপরের দিন যথাসময়ে বিতর্ক শুরু হলো। সেইদিনের বিতর্ক চলাকালীন পাগলামিগুলো আজ যদি ঠিক মনে থাকত তবে নেহায়েত মন্দ হতো না।

তবে মনে পড়ে আমার দল বড় ভাইয়ার দলের কাছে হেরেছিল। পুরস্কার পাব না বলে সেইদিন খুব মন খারাপ হয়েছিল। তবে সেইদিন আমিই হয়ে ছিলাম সেরা বির্তাকিক। 

এই শুরু বিতর্ক কি তা আস্তে আস্তে বুঝতে লাগলাম, শিখতে লাগলাম। বির্তকের প্রতি একটা ভালোবাসা জন্মাতে শুরু করল।

টিভিতে বির্তকের কোনো অনুষ্ঠান মিস হতো না আমার। স্বপ্ন দেখতে লাগলাম একদিন আমিও ওদের মতো অনেক ভালো বির্তাকিক হবো।

স্কুলে কোনো বির্তক ক্লাব ছিল না তাই বিতর্ক করারও তেমন  একটা সু্যোগ হতো না, তবে মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকলে মিস করতাম না।

বন্ধুদের নিয়ে টিম করে অংশ নিতাম বির্তক প্রতিযোগিতায়। এজন্য আম্মুর যে কত বকা শুনেছি তা অংক কষে বের করা কঠিন। কিন্তু এত কিছুর পর ও মন খারাপ হতো এই জন্য যে যেখানেই  অংশ নিতাম সেখানেই আমরা হেরে যেতাম।

তবে একটা ব্যাপার আমার সঙ্গে ঘটত সব সময়। আর তা হলো আমি যে কটা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম তার প্রায় সবকটিতে আমি সেরা বিতার্কিক হয়েছিলাম।

যা বির্তকের প্রতি আমার ভালোবাসা দ্বিগুণ করে দিয়েছিল। তবে মজার বিষয় হলো বির্তক প্রতিযোগিতাগুলিতে আমরা যে দলটার কাছে সব চেয়ে বেশি হেরেছি আজ আমি সেই দলের বির্তক ক্লাবের একজন মেম্বার।

আমি এখন ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ বির্তক ক্লাবের একজন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মেম্বার।

আশা রাখি আমিও একদিন সফল বির্তাকিক হব। স্যারকে অনেক ধন্যবাদ তিনি যদি ওইদিন বির্তকের প্রতি আমাকে উদ্বুদ্ধ না করতেন তাহলে আমার এতদূর আসা সম্ভব হতো না।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com