আমার প্রথম ট্রেন ভ্রমণ

আমার প্রথম ট্রেন ভ্রমণ

আজ বলব জীবনে প্রথম ঢাকা যাওয়া ও ট্রেনে চড়ার গল্প। ঘটনাটা ২০১০ সালে মার্চ বা এপ্রিল মাসের।

আমার বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরেই ছিল ট্রেন স্টেশন। প্রতিনিয়ত ট্রেনের ঝিক ঝিক শব্দ ও হুইসেল শোনেই বড় হয়েছি আমি।

আমি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় আমাদের দুই ভাই বোনকে বাড়িতে রেখে আমার মা ঢাকা চলে যান কাজের খোঁজে। মা ট্রেনে বাড়ি ছেড়েছিলেন। এরপর দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠে শামসুর রাহমানের লেখা ‘ট্রেন’ ছড়াটি পড়ে ট্রেনে ওঠার শখ ভালো ভাবে পেয়ে বসে।

মাকে জানাই আমার ইচ্ছের কথা। কিন্তু মা কিছুতেই রাজি হন না। এমনকি বাবাও না করেন।

এরপর পেরিয়ে যায় দুই বছর। আমি তখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। একদিম মা ফোন করে বললেন, খালুর সঙ্গে ঢাকা যেতে।

এটা শুনে আমি তো মহাখুশি। রাতে খালার বাড়ি থেকে ভোর রাতে ৪.১৫ মিনিটে আমি ও খালা, খালুর সাথে রিকশায় করে ইসলামপুর স্টেশনে চলে যাই। খালু আমার ও খালার জন্য অনেক কষ্টে দুটো টিকেট কিনে আনেন।

আমাদের ট্রেনটির নাম ছিল ‘জামালপুর কমিউটার’। তখনও ট্রেন এসে পৌঁছেনি। স্টেশনে আমাদের মতো অনেক যাত্রী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ৫.১৫ মিনিটে ট্রেন এলো।

আমাদের রুটে ট্রেনে সংখ্যা কম হওয়ায় সব সময়ই ভিড় থেকেই যায়। ভিড় ঠেলে আমরা কোনো রকমে ট্রেনে উঠে পড়ি। আমি জানালার পাশে বসলাম। বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনটি ধীরে ধীরে চলতে শুরু করল।

এক ধরনের আনন্দ ও উত্তেজনায় আমার বুকের ভেতর ধরফর শুরু হলো। আমি বুঝতে পারলাম অবশেষে আমার স্বপ্নের ট্রেন ভ্রমণ শুরু হয়েছে।

ঝক ঝক শব্দ ট্রেনে এগিয়ে চলছে। প্রথমে ধীরে পরে দ্রুত গতিতে। প্রথমে আমি ভয় পেয়েছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার স্বাভাবিক হয়ে যাই। জানালা দিয়ে আমি বাইরে তাকালাম। বিভিন্ন দৃশ্যপট আমার চোখে সামনে পড়ছিল। ক্রমশ দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। মনে হলো গতির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে রাস্তার পাশের গাছপালা, ঘরবাড়িসহ সব কিছু যেন উল্টো দিকে ছুটছে। গ্রাম এলাকা দিয়ে চলতে শুরু করল তখন অপূর্ব দৃশ্য চোখে পড়ছিল। কোথাও বিস্তীর্ণ মাঠ, সবুজ ধানের ক্ষেত্র, কোথাও বা বিস্তীর্ণ জলরাশি। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা রেললাইনে দাঁড়িয়েছিল। একটা গ্রামের রাস্তায় তো গরুর গাড়ি চলতে দেখলাম।

এসব দৃশ্য সত্যিই আমাকে মোহিত করে। এই দিকে ট্রেনের ভেতরে কিছুক্ষণ পর পর আসছে বিভিন্ন হকার। তারা হৈ চৈ করে আবার চলেও যাচ্ছেন। আমি দেখলাম ট্রেনই একটা অস্থায়ী বাজারে মতো হয়ে উঠেছে।

আমাদের ট্রেনটি চলছিল ময়মনসিংহ দিয়ে গাজীপুর হয়ে ঢাকার পথে। ট্রেনটি যখন ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা পার হয়ে গাজীপুর ঢুকল তখনই চারদিকে দেখতে পেলাম শালবোন।

এমনকি কোথাও কোথাও লাল মাটির ছোট বড় ঘরও দেখলাম। এগুলো দেখে আমার খুব ভালো লাগছিল। মনে হচ্ছিল নেমে ঘুরে আসি।

এই ভাবেই দেখতে দেখতে বন পার হয়ে, শহরে দিকে পৌঁছুতেই চারদিকে দেখতে পাই বড় বড় দালান কোঠা। দেখতে দেখতে কখন জানি সময় শেষ, কমলাপুর স্টেশনে  চলে গেছি। নেমে দেখি আমার মা অপেক্ষা করছেন, আর চারদিকে বিভিন্ন পেশার লোক, কুলিদের হাকডাক, হকার ফেরিওয়ালাদের চেঁচামেচিতে মুখরিত এক স্টেশন।

আমি কখনও এত লোক এক সঙ্গে দেখিনি। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি চারপাশটা। ঢাকায় যখন পা রাখি তখন ঘড়িতে সোয়া ১২টা বাজে। স্টেশন থেকে বেড়িয়েই তো আমার হোঁচট খাওয়ার অবস্থা। এত বড় বড় দালান, এত ভিড় দেখতে দেখতে কখন যে বাসায় পৌঁছে যাই টের পাইনি।

Related Stories

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com