সঠিক নিরাপত্তা কবে পাবো আমরা?
আমাদের বাসায় মেহমান আসলে প্রায় সময়ই এমন আলোচনা শোনা যায়। কিন্তু কেন আজও আমরা একটা স্বাধীন দেশে থেকে, একা চলা ফেরা করতে পারব না? কেন আমাদের কোনো নিরাপত্তা থাকবে না? শিশুরা ছোট থেকে এরকম বন্দী জেলখানার মধ্যে বড় হচ্ছে বলেই তো স্বাধীনভাবে বিকশিত হতে পারছে না, স্বাধীন চিন্তাধারার, একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারেছে না!
শিশুরা এখন ভ্রমণ কাকে বলে তা জানে না। বর্তমানে শিশুদের কাছে ‘বাইরে যাওয়া’ কথাটার মানে হলো নিজের বাসা থেকে রিকশা বা সিএনজি করে স্কুল বা কলেজে যাওয়া অথবা নিজ বাসা থেকে টিচারের বাসায় যাওয়ার মধ্যবর্তী রাস্তাটুকু।
কয়েকদিন আগে আমার জীববিজ্ঞানের টিচার বলছিলেন, ‘যখন ছোট ছিলাম, তখন সকাল হলেই স্কুলে যেতাম, স্কুল থেকে এসে খেয়ে দেয়ে বিকেল হলেই দে ছুট! বন্ধুদের সাথে খেলতে চলে যেতাম। তখন এখন যেই জায়গায় তোমরা বিল্ডিং দেখছ, এগুলো সব ডোবা ছিল। আমরা এখানে খেলতাম। বাসায় অনেক সময় মা-বাবা জানতেনও না যে, কোথায় খেলতে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের খেলার একটা নির্দিষ্ট সময় ছিল। আর সেটা ছিল বিকাল থেকে মাগরিবের আযানের আগ পর্যন্ত। মাগরিবের আযানের সাথে সাথে বাসায় চলে আসতে হতো। আর এখন আমার বাচ্চাকে খেলতে দেব কী, ও যদি বাসার নিচেও যায়, তাহলেই টেনশন লাগে।’
উনার একটা কথা বারবার আমার কানে লাগছিল, ‘টেনশন লাগে।’ তাহলে আসলে আমরা কোথায় নিরাপদ? বাড়িতে? স্কুলে? কলেজে? কোথায়? কোথায় শিশুকে রেখে বাবা-মা টেনশন মুক্ত থাকতে পারবেন?
টিভিতে, রেডিওতে, সংবাদ পত্রে, ফেইসবুকসহ নানা জায়গায় বাবা-মারা প্রতিনিয়ত দেখছেন, ধর্ষণ, মারামারি, নিযার্তন, হত্যাসহ নানা ধরনের অপর্কমের চিত্র! এগুলো দেখার ফলে তাদের মধ্যে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে একধরনের আতঙ্ক। মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগছে, ‘এরকম যদি আমার শিশুটার সাথেও হয়!’
বলা যায় যে, বর্তমানে আমরা সব কাজেই পুরোপুরিভাবে বাবা-মার উপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছি। এর ফলে আমাদের অভিজ্ঞতা তৈরি হচ্ছে না। ফলে আমরা চিনতে পারছি না আমাদের আশেপাশের পরিবেশটাকে। আমরা বুঝতে পারছি না কোন পরিবেশে আমরা বড় হচ্ছি এবং এই পরিবেশে, এই সমাজে টিকে থাকতে হলে আমার নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করা প্রয়োজন।
বর্তমানে কী শহরে, কী প্রত্যন্ত গ্রামে শিশু সুরক্ষা বা শিশু নিরপাওার বিষয়টি আজও উপেক্ষিত। আমার প্রায়ই নিজের মধ্যে প্রশ্ন জাগে, ‘এই স্বাধীন কিংবা উন্নত দেশে, কেন আজও একজন মা-বাবা শিশুকে স্কুলের গেটের সামনে রেখে এসে চিন্তুায় থাকবে যে শিশুতে তারা পরবর্তীতে স্কুল থেকে আনতে গিয়ে সুস্থ- স্বাভাবিক অবস্থায় পাবে কিনা, কেন এখনও একটা শিশুকে হাত ধরে বাবা-মাকে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিয়ে আসতে হবে?’
তাহলে শিশুদের অপরাধটা কোথায়? দেশের পরিবেশের কারণে এবং দেশের কিছু নোংরা মানুষের জন্য একটি শিশু কেন স্বাধীনভাবে চলতে পারবে না? নিরাপত্তাটাও তো আমাদের অধিকার। এই অধিকারটা আমরা কবে পাবো? এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে আমাদের?