তৃপ্তি আমার চার বছরের ছোট। ও অনেক অনেক ফর্সা। চুল সোনালি, চোখ বাদামী। ওকে দেখতে একেবারেই ব্রিটিশদের মতো লাগে। আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশীরা ওকে মেম সাহেব বলেই ডাকে। অপরিচিত কেউ কেউ আবার জিজ্ঞেস করে ও বাঙালি নাকি, বাংলা বোঝে নাকি। অতি উৎসাহীরা ওর সঙ্গে ছবি তুলে ফেইসবুকে দিয়েছে এমন ঘটনাও আছে। বাগেরহাট খুব ছোট শহর। তাই এখানের অনেকের কাছেই তৃপ্তি খুব পরিচিত বিদেশি নামে।
সব কিছু মিলিয়ে খুব ভালোই লাগে তৃপ্তি আমার ছোট বোন তাই। ওর সব বায়না, আবদার আমার কাছেই। ও খুব দুষ্ট প্রকৃতির। অনেক সময় আম্মুর চোখে লুকাতে চেষ্ট করি ওর দুষ্টমিগুলো। যেমন বাবার টুথব্রাশে কাপড়ে দেওয়া নীল কে ফেলছে? আম্মুর এমন প্রশ্নে আমি বলছি আমি ফেলেছি। আম্মু বলে তা হলে তৃপ্তির হাতে এই রং কেন? কি বলবো উত্তর খুঁজে না পেয়ে তাড়াতাড়ি বলি আম্মু ক্ষুধা লেগেছে, ‘আজ বিকালের নাস্তায় কি বানাচ্ছো ?’
সব ভালোর ভেতরেই কিছু খারাপ থাকে। তেমনই তৃপ্তিকে নিয়ে অনেক ভালো মুহুর্তের মধ্যে কিছু খারাপ লাগাও আছে।
যখন কেউ বলে তৃপ্তি এতো সুন্দর কিন্তু আমি কালো কেন? তখন কি বলবো মাঝে মাঝে উত্তর খুঁজে পাই না। যখন কেউ বলে তৃষাকে তো তৃপ্তির বোনের মতো লাগেই না। দুইজনের তো আকাশ পাতাল পার্থক্য।
যখন কেউ বলেন, ‘তৃষা তুমি একটু বড় হয়ে রুপচর্চা করবা, দেখবা তৃপ্তির মতো ফর্সা হতে পারবা,’ তখন আমার খুব বিরক্ত লাগে।
আচ্ছা আমি ফর্সা না হলে কি সমস্যা? কালো হওয়াতো অন্যায় নয়। ফর্সা কি হতেই হবে? এটা কি খুব প্রয়োজনীয়?
যদিও এমন কথা কেউ আম্মুর সামনে বললে আম্মু আমার মন ভালো করা কথা বলেন। কিন্তু আমি কালো এটা নিয়ে মন খারাপের চেয়ে মন ভালো হয় অনেক বেশি। কারণ আমার ছোট বোনটা অনেক অনেক ফর্সা। আমি চাই তৃপ্তি শুধু দেখতে সুন্দর না মানুষ হিসেবেও সুন্দর হোক। আমি যা কিছুই করি তৃপ্তি আমার দেখাদেখি তাই করে। আর তাইতো অনেক দায়িত্ব আমার।
আমাকে সব সময় ভালো কাজ করতে হবে। সঠিক পথে চলতে হবে। পড়ালেখায় অনেক ভালো হতে হবে।
জানি কালো বা ফর্সা মানুষের সৌন্দর্য নয়। মানুষের সৌন্দর্য তার মনে। আমার আম্মু বলেন, “যে বা যারা গায়ের রং দেখে মানুষ সুন্দর কি না বিচার করে তারাই কুৎসিত।”
মানুষ যদি তার কথায়, কাজে, ব্যবহারে সুন্দর হয় তা হলে আমি অনেক অনেক সুন্দর হতে চাই, হতে চাই কৃষ্ণকলি।