আমার স্বপ্নের কলেজ

স্কুল থেকেই কলেজে পড়ার স্বপ্ন আমাকে উচ্ছ্বসিত করেছে বার বার।
আমার স্বপ্নের কলেজ

এসএসসির আগে কলেজ নিয়ে কত শত ভাবনা যে ছিল তা বলে শেষ করতে পারব না। কলেজের শ্রেণিকক্ষগুলো কেমন হবে, শিক্ষকদের আচরণ কেমন হবে, নতুন বন্ধুগুলো কেমন হবে এই চিন্তায় মশগুল থাকতাম আমি।

সবচেয়ে বড় কথা কোনো বাঁধা ধরা নিয়ম আটকে রাখতে পারবে না আমাকে, শিক্ষকের বেতের পিটুনি খেতে হবে না, নিজের ইচ্ছামতো পড়াশোনা করব।

তারপর সময় হলো এসএসসি পরীক্ষার। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিলাম। অসুস্থতা নিয়ে পরীক্ষা দিয়েও অন্য সবার চেয়ে ভাল ফল হলো। তবে পরিবার বেশি খুশি না। 

বাবা স্কুল শিক্ষক ছিল বলেই হয়তো আমি আজ ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজের মানবিক বিভাগের ছাত্রী। আমাদের এলাকার মতো অনেক মেয়েই তো পরীক্ষার পর স্বামীর বাড়ি চলে গেছে।

সেদিক থেকে আমি অনেক ভাগ্যবান। তবে বাবা, মা আর আমার বড় ভাইকে ছাড়া ঠাকুরগাঁও শহরে থাকতে খুব কষ্ট হয়। মনে পড়ে ভাইয়ার সাথে ঝগড়ার দিনগুলো, ভাইয়ার কথাই  বেশি মনে পড়ে। ঠাকুরগাঁও শহরে এখন ফুপুর বাসা থেকেই ক্লাস করি আমি ও আমার প্রিয় বান্ধবী রুম্পা।

বলছি কলেজের প্রথম দিনের কথা। কলেজে বের হবার মুহূর্তে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। মনটা খারাপ হয়ে গেল। সেদিন এবং তার পরের দিনও বৃষ্টির জন্য কলেজ যাওয়া হয়্নি আমা। মিস করি নবীন বরণ অনুষ্ঠানও।

খুব ইচ্ছা ছিল নবীন বরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেবার কিন্তু তা হলো না। তারপর তৃতীয় দিন কলেজে গেলাম। তৃতীয় দিন হলো আমার প্রথম দিন। চারপাশের বড় বড় ভবন, রাস্তায় সারি সারি গাছ, আমার ক্লাস রুম কীভাবে পাব? আমি ক্লাসরুমের খোঁজ করতে লাগলাম এক বড় আপুর সাহায্য নিয়ে। পেয়ে গেলাম ক্লাসরুম।

আমি মানবিক বিভাগের ক্লাসরুমে বসলাম। খুব চমৎকার বাংলা ক্লাস নিলেন খাইরুল স্যার। ক্লাসে অনেক সাধারণ জ্ঞানও দিলেন। ভালো লেগেছে বাংলা স্যারের ক্লাস, নতুন বান্ধবী তমা, পাখি, অর্পিতা, রূম্পার সাথে । এরপর দোতলার বারান্দায় কলেজ নিয়ে গল্প হচ্ছিল।

আমার কলেজ কিন্তু সাজানো গোছানো। কলা ভবন, বিজ্ঞান ভবন, লাইব্রেরি, যার তাকে তাকে থরে থরে সাজানো গোছানো বিখ্যাত লেখক, সাহিত্যিক, কবি, প্রাবন্ধিকের মোটা মোটা বই, কাঠের টেবিলে পড়ে আছে জাতীয়
ও স্থানীয় পত্রিকা।

লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখি কেউ কেউ বই পড়ছেন আবার কেউ পত্রিকা, সবাই যেন মূর্তি, কোনো কথা নাই। মনযোগ শুধুই বই বা পত্রিকায় আটকে আছে। লাইব্রেরিটাই আমার বেশি পছন্দ হলো, তবে ক্যান্টিনের অবস্থা খারাপ, পরিবেশটা বেশি ভালো না। কেমন জানি! তারমধ্যে খাবারের মান নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আবার ক্যান্টিনে ঠিক মতো লোকও থাকে না। ফলে বিড়ম্বনা পোহাতে হয় অনেক শিক্ষার্থীকে।

প্রিয় শহরের প্রিয় কলেজ, নতুন বন্ধু, আর বাবা মায়ের ভালাবাসা নিয়ে আগামীর পথে এগিয়ে যাবার স্বপ্নই এখন আমার চোখে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com