গোপাল ভাঁড় থেকে শার্লক হোমস

ছোটবেলা থেকেই গল্পের বই পড়ার প্রতি আমার আকণ্ঠ পিপাসা। হোক তা দশ টাকার গোপাল ভাঁড়ের বই বা পুরনো বইয়ের দোকান থেকে কেনা একশ টাকা দামের শার্লক হোমসের বই।
গোপাল ভাঁড় থেকে শার্লক হোমস

তবে গোপাল ভাঁড় থেকে শার্লক হোমস পর্যন্ত পৌঁছাতে আমাকে লম্বা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। কারণ আর কিছুই নয়, সিলেবাসের বাইরের বইয়ে মায়ের কাছ থেকে আমার কোনো বরাদ্দ ছিল না। যে পড়ুয়ার অগাধ বইয়ের বা বই কেনার পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ আছে; সে আমার এই যাত্রার যে কষ্ট তার মর্ম বুঝবে না। 

গোপাল ভাঁড় বা ওরকম চটি বইয়ে আমার বই পড়ার পিপাসা মিটত না। খোঁজে থাকতাম কোথায় পাবো আরো মোটা মোটা বই! যা আমার পড়ার পিপাসা মেটাতে পারে।

এক বড় ভাইয়ের কাছে কিছু বইয়ের সন্ধান পেয়ে গেলাম তার কাছে। তার যেটুকু সম্বল, ফুরাল খুব তাড়াতাড়িই। সেখানেই পেলাম, আনিসুল হকের লেখা ‘ফাঁদ’ এবং মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহিত কামাল রচিত ‘মায়াবতী’ বইটি। বই দুটির কথা ভুলিনি আজও।

ভালো বা বিখ্যাত বই নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নাই। আমার দরকার মোটা মোটা বই। যা পড়ে শেষ করতে অনেক দিন লাগে। কিন্তু সেরকম বইয়ের দাম অনেক। সে টাকা কোনোমতেই মা আমাকে দেবেন না বা তার কাছে এসব বই মানে আজেবাজে বই। আর সে বইয়ের জন্য টাকা জোগানোতে তার সামর্থ্য বা ইচ্ছা কোনোটিই নাই!  

মাকে লুকিয়ে কিনতে যদিও পারি কিন্তু মাকে না দেখিয়ে পড়ব কীভাবে? মা তো আমায় মেরেই ফেলবে এত টাকা নষ্ট করতে দেখলে।

একবার কয়েকটা ঈদকার্ড কিনেছিলাম বন্ধুদের দেবো বলে। সেগুলি দেখার পর মা যে ধোলাই দিয়েছিল তা আর বলার নয়। আজ সেই কথা মনে পড়লে কেন জানি হাসি পায়।   

খুঁজতে খুঁজতেই সন্ধান পেলাম এক পুরনো বইয়ের দোকানের। দোকানদার জানালেন, আগের মতো এখন আর গল্প বা উপন্যাসের বই রাখি না। বই আজকাল আর কেউ কেনেটেনে না।   

তবু কয়েকটি বই আমাকে দেখালেন। বইগুলির অবস্থা বেশি ভালো নয়। তবে তার মধ্যে একটি বই আমি খপ করে ধরে ফেললাম। দাম একশ টাকা। হোক একশ টাকা দাম তবু কিনে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলাম।

বিশ্ব বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র শার্লক হোমস রচনা সমগ্র। বিশাল বিশাল চারটি উপন্যাস আছে সংকলনটিতে। তারমধ্যে দ্য সাইন অব ফোর আর হাউন্ড অব দ্য বাস্কারভিল্‌স আমার কাছে সেরা মনে হয়েছে।   

তিনচার দিনেই ফুরিয়ে গেল সেই বইও। তবে পড়তে পড়তে আমি হোমসের ভক্ত হয়ে গেছি। প্রতিটি লেখা নাটকীয়তা আর টানটান উত্তেজনায় ভরা। শুরু করলে শেষ না করে ওঠা যায় না।  

শার্লক হোমস পড়তে পড়তে নিজের অজান্তেই নিজেকে হোমস ভাবতে শুরু করি। মনে হয় পৃথিবীর রহস্যজনক সব সংবাদ পড়ছি আমি, পাশে পড়ে আছে শত রহস্যের জট খোলা আতস কাঁচ। আর আছেন বন্ধু ডা. ওয়াটসন। যেখানে সরকারি গোয়েন্দা কিছুই কিনারা করতে পারছে না সেখানে হোমসের মতো আমি শেখ নাসির, সেই জটিল সমস্যার সমাধান করে ফেলছি!   

সবচেয়ে অবাক হয়েছি শার্লক হোমস নামে কোনো চরিত্র আদপেই নাই, সেটা জেনে। একটা কাল্পনিক চরিত্রকেই এতো ভালবেসেছি যে তার বাস্তবে না থাকাটা আমার মনে খুব কষ্ট দিয়েছে।

শার্লক হোমসের স্রষ্টা স্যার আর্থার কোনান ডয়েল, ১৮৫৯ সালে এক আইরিশ পরিবারে জন্ম নেন। পরে ব্রিটিশ সামরিক বিভাগে ডাক্তার হিসাবে যোগ দেন। তখন থেকেই তিনি বিখ্যাত মার্কিন লেখক অলিভার ওয়েন্ডেল হোমসের নাম থেকে হোমস পদবি নিয়ে লেখা শুরু করেন। আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা পান তিনি।  

আর্থারের ছেলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মারা গেলে তিনি আর না লেখার ঘোষণা দেন। কিন্তু পাঠকমহল তা মেনে নিতে পারেনি। পাঠকের দাবি মেনে নিয়ে 'রিটার্ন অব শার্লক হোমস' নাম দিয়ে আবার লেখা শুরু করেন তিনি। 

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com