অনন্য এক গল্প

সম্প্রতি নেপালের কাঠমন্ডুতে ইউনিসেফ আয়োজিত দক্ষিণ এশিয়ার ‘তরুণ প্রজন্মের উন্নয়ন’ বিষয়ক তিন দিনের এক সেমিনারে যোগ দেই।
অনন্য এক গল্প

সেখানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলংকার শিশু প্রতিনিধিরাসহ উপস্থিত ছিলেন ইউনেস্কো, ইউএন, ইউনিসেফের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা।

হ্যালোর শিশু সাংবাদিক হওয়ার সুবাদে পাওয়া এই সুযোগ নিজেকে নতুন করে জানার পথ তৈরি করে দিয়েছে।

আমি আমার দেশকে কতটা ভালোবাসি তা বুঝেছিলাম দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পক্ষ থেকে প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সময়। পুরো দক্ষিণ এশিয়ার পক্ষ থেকে প্রেজেন্টেশন দেওয়া আমার জন্য সত্যিই খুব বড় সম্মানের ছিল।

আমি দক্ষিণ এশিয়ার পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ বাকি দেশ গুলোর সব সমস্যা লিপিবদ্ধ করে দক্ষিণ এশিয়ার সমস্যা ও সেগুলোর সমাধানের পরিকল্পনা তুলে ধরার চেষ্ঠা করেছি। আমি যতবারই “বাংলাদেশ” নামটা উচ্চারণ করছিলাম আমার মনে হচ্ছিল এতো গর্বিত আমি আগে কখনও হইনি।

আমার সাথে পাকিস্তানের একজন মেয়ে ছিল। আমি প্রেজেন্টেশনে যখন পাকিস্তানের প্রেক্ষাপট তুলে ধরছিলাম, বিশেষ করে নারীদের উপর নির্যাতন, শারীরিক নিপীড়ন ও অসম্মানে কথা আমি অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকে রেখেছিলাম। ভারত আগের থেকে উন্নতি করেছে তবে কুসংকার এখনো তারা দূর করতে পারেনি। তবে হ্যাঁ নারী উন্নয়নে নেপাল অনেকটা এগিয়ে। কারণ প্রতিটা ঘরেই কম করে হলেও একজন কর্মজীবী নারী রয়েছে। তবে তাদের রাজনৈতিক অরাজকতার কারণে কিছুটা পিছিয়ে আছে।

ভুটানও নারী স্বাধীনতার ব্যাপারে অনেক এগিয়ে। শ্রীলংকা শিক্ষার ক্ষেত্রে সচেতন। আর যখন আমি বাংলাদেশের কথা বলছিলাম তখন আমি নিজেকে আমাদের দেশের সেই সুবিধা বঞ্চিত নারীর অবস্থানে রেখেই সেগুলো তুলে ধরেছি। তবে হ্যাঁ একটি জিনিস বিভিন্ন দেশের বয়োজৈষ্ঠরাও জোড় দিয়ে বলেছেন, যে বাংলাদেশ “উমেন ইমপাওয়ারমেন্ট” এ তুলনামূলক এগিয়ে।

এরপর আমি কথা বলি তরুণ প্রজন্মের উন্নয়ন নিয়ে। এ ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো আমাদের ইচ্ছাগুলো আমাদের অভিভাবকদের ইচ্ছার নিচে চাপা পড়ে অকালে ঝরে যায়। অধিকাংশ অভিভাবকেরা আমাদেরকে দিয়ে তাদের ছোট বেলার স্বপ্নপূরণের জন্য উঠে পড়ে লাগেন। আমাদের মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চ শিক্ষার এই শিক্ষার মূল্যায়ন থেমে যায় চাকরি না পেলে। এটির বড় কারণ হলো আমাদের হাতে কলমে শিক্ষার অভাব।

তরুণরা বেশি আত্মহত্যা করে চাকরি না পাওয়া, পারিবারিক ও প্রেমজনিত মানসিক অত্যাচারের জন্য। বিশেষ করে আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে চাকরি দেওয়ার চেয়ে চাকরি পেয়েছে কিনা এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় বেশি। এসমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে যায় তরুণরা। যার ফলে তারা বাইরে যেতে চায় না, আত্মীয়দের বাসায় যেতে চায় না।

উন্নত দেশে ১৮ বছরের পরেই শিক্ষার্থীরা স্বাবলম্বী হয়। তারা নিজেদের কাজ নিজে করে সেই সাথে দেশের উন্নয়নে অংশীদার হয়।

কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, আমরা পারলে আজীবন মা-বাবার উপর নির্ভর করি।

এ দেশগুলোতে অনেক সুবিধা বঞ্চিত শিশু আছে। তারা না পাচ্ছে মৌলিক অধিকার না পাচ্ছে সামাজিক মর্যাদা। আমরা তাদের সর্বনিম্ন বেঁচে থাকার সুবিধাগুলোও নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছি।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন নিয়েও আলোকপাত করি। কারিগরি শিক্ষার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে উৎসাহ দিতে হবে। ক্যারিয়ার ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা দরকার। আমাদের শিক্ষা ব্যবসথা শুধুমাত্র পরীক্ষার নম্বর পেতে শেখায়, কাজে দক্ষতা তৈরি করে না।

এছাড়া শিশু নির্যাতন নিয়েও কথা বলি। শিশুরা বাদ যায় না যৌন নির্যাতন থেকে।

গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা তুলি ধরি তা হলো বয়ঃসন্ধিকাল। আমাদের দেশগুলোতে অনেক ছেলে-মেয়েরা বয়ঃসন্ধিকালকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে না। শারীরিক অনেক সমস্যাও তারা গোপন করে। এতে মানসিক সমস্যাতেও পড়ে তারা। অভিভাবকের অসচেতনতা এর জন্য দায়ী।

সেদিনের প্রেজেন্টেশনের পরে আমি কয়েকটি জিনিস মন থেকে বিসর্জন দিয়েছি। প্রথমত আমি শুধু মেয়ে না আমি একজন মানুষ। আমি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ও আইন তৈরিতে আমার মতামতের গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত যদি আমি যদি সফলতা অর্জন করি এর মানে আমার যোগ্যতা আছে। সমাজের কারও আমার সাফল্যের চাবি কাঠি হিসেবে আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার নেই। আমার পোশাক, আমার পছন্দ। আমার চোখে যারা পোশাকের দৈর্ঘ্য দেখে চরিত্র বিচার করে তারা নির্বোধ। আর নির্বোধদের সাথে তর্ক করে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করার মতো বোকা নই।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com