কিন্তু মেয়ে হিসেবে এই স্বপ্ন দেখে যেন অপরাধই করে ফেলেছিলাম। একটু বড় হবার পর যখন ব্যাট-বল নিয়ে মাঠে নামতাম সমালোচনার কোনো শেষ থাকত না। কয়েকজন সরাসরি বলেছেন, ‘বাদ দাও। নইলে পস্তাবে।’ তাই বাদ দিয়েছি। কেউ কেউ বলত, ‘যে তোমার টিম, তাতে আবার খেলে কি এমন পাবা!’
মেয়েরা তো ক্রীড়াক্ষেত্রে বঞ্চিতই। সেটা তো আমরা টের পাইই। কিন্তু মেয়েরা যে পারে না এমন আমরা কেন ভাবি আমি জানি না। এত্ত অবহেলিত টিমও কিন্তু কিছু করে দেখাল।
নারী এশিয়া কাপের একের পর এক জয়ের খবর তো পাচ্ছিলামই। মনে হচ্ছিল আমিও যেন তাদের সাথে খেলছি। অন্য খেলাগুলো না দেখলেও ফাইনালটা দেখেছি।
খেলা দেখছিলাম খুব আরাম করে। ভারতের ব্যাটিং দেখে আমি অবাক হই। এত্ত ভালো টিম আমাদের রুমানা-সালমাদের সামনে কাহিল হয়ে যাচ্ছিল। বেশ উত্তেজনা নিয়ে যখন প্রথম ইনিংস শেষ হলো আমি তো জয়ের স্বপ্ন দেখেই ফেলেছি!
ইলেক্ট্রিসিটি না থাকায় বাংলাদেশের ব্যাটিং শুরু থেকে দেখতে পারিনি। ১৮তম ওভার যখন ১২ বলে ১৩ রান দরকার তখন খেলা দেখা শুরু করলাম। দেখেই মনটা আনন্দে নেচে উঠল।
১৯.৪তম বলে রুমানা আউট হলে আমি আশা হারিয়ে ফেললাম। হয়তো ছেলেরা যেভাবে প্রথমবারে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠে এক রানে হেরেছে মেয়েদের বেলাও তাই ঘটবে। টিভি বন্ধ করে চুপচাপ বসে বৃষ্টি দেখতে লাগলাম। মন বিষণ্ণ।
হঠাৎ মনে হলো একটু দেখিই না কী হলো। তাই টিভিটা একটু অন করলাম। মাথাটা দুইবার ঘুরে গেল জয়ের খবর দেখে। সামলে উঠে দুইটা চিৎকার দিলাম। বোনদের কাছে গিয়ে চিৎকার করেই বললাম। তারপরে কয়েকজনের চিৎকার একসাথে! আনন্দে কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না!
এই অর্জনে যেন আমিও খেলেছিলাম। আমিও রুমানার মত ব্যাটে বলে যাদু দেখিয়েছি। আমিও সালমা-জাহানারার মতো শেষ মুহূর্তে সামাল দিয়েছি।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ অর্জনটা মেয়েদের হয়ে গেল। আবারো বলটা আমার হাতে ধরার ইচ্ছা হলো। লাল-সবুজের জার্সিটাকে গায়ে পরার ইচ্ছা হলো। দুয়েকটা কাপ হাতে ধরার ইচ্ছা হলো। বিজয়ের হাসি প্রাণভরে হাসলাম এবং আরো হাসতে ইচ্ছা হলো!