ভালো রেজাল্ট হওয়ায় মা বাবার প্রত্যাশাও বেড়ে যায়। আমাকে ভর্তি করা হয় ক্যাডেট কোচিং এ। আমিও ভেবেছিলাম পড়লে ক্যাডেটে ভর্তির সুযোগ পাব। কিন্তু হুট করেই ছন্দ পতন হয়ে যায়। আমি খেই হারিয়ে ফেলি পড়ালেখার। একদিকে আম্মু বাবার প্রত্যাশা অন্যদিকে আমার পড়ায় মনোযোগ না আসা আমাকে অস্থির করে ফেলে। কিছু বুঝে ওঠার আগে বছর শেষ হয়ে ক্যাডেটের ভর্তি পরীক্ষাও চলে আসে। আমি জানতাম আমি পারব না। তবুও পরীক্ষায় বসি। খুব একটা খারাপ দেইনি। তবে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার মতো ভালোও করিনি।
তবে ধীরে ধীরে আগের ভালো ছাত্র জয় কোথায় যেন হারিয়ে গেল। এখন আমি শেরপুর সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমিতে ক্লাস এইটে পড়ি। সামনে জেএসসি তাই যথেষ্ট চাপে আছি। স্কুল, কোচিং ও প্রাইভেট নিয়েই থাকতে হয় সারাদিন।
এখন সবার মুখে একটিই কথা পিএসসিতে বৃত্তি পেয়েছ তোমাকে জেএসসিতেও বৃত্তি পেতে হবে। একটু যারা সদয় তারা বলেন বৃত্তি লাগবে না, গোল্ডেন পেলেই হবে। আর যারা আমাকে একটু বেশি ভালোবাসেন তারা বলেন গোল্ডেন পেতে হবে না, জিপিএ পাঁচ পেলেই হবে। কিন্তু এর চেয়ে বেশি আর কেউ ভালোবাসে না। কারণ জিপিএ পাঁচের নিচে কেউ আশা করেন না।
পরীক্ষার আছে আর পাঁচ মাস। সবাই আমাকে নিয়ে খুব সিরিয়াস। কিন্তু আমি যথেষ্ট রকমের স্বাভাবিক আছি। বাসায় বলে ভালো রেজাল্ট না করতে পারলে সবার সামনে গিয়ে কথা বলতে পারব না, রেজাল্ট নিয়ে গল্প করতে পারব না। আর আমার বোন কাকু ফুপুদের কাছে আমাকে নিয়ে খুব গর্ব করেন। উনার ভয় আমি রেজাল্ট খারাপ করলে উনি আর মুখ দেখাতে পারবেন না তাদের সামনে।
অনেক কথাই শুনতে হচ্ছে এই পরীক্ষা নিয়ে। আমি যদি পিএসসিতে খারাপ রেজাল্ট করতাম তাহলে বলতো আগের বার খারাপ করেছ এবার ভালো করতে হবে। আর এখন বলেছন, “আগে ভালো করেছ এবারও ভালো করতে হবে। এখন খারাপ করলে মানুষ কী বলবে? উভয় সংকটে পড়েছি! আমি জানি অভিভাবকরা ভালো চান কিন্তু আমিও মানুষ।
যখন এসব পরিস্থিতির স্বীকার হই তখন আর কিছু করার থাকে না। চুপচাপ চোখ বন্ধ করে বলতে থাকি, “অল ইজ ওয়েল জয়, অল উইল বি ডেফিনেটলি ওয়েল।”