শিশুর জন্য দরকার মা বাবার উৎসাহ

আজ এই লেখাটা লিখছি আমাদের এই সমাজের সব বাবা-মার জন্য। যদি শিশু হিসেবে বেশি কিছু লিখে ফেলি, তাহলে ক্ষমা করবেন।
শিশুর জন্য দরকার মা বাবার উৎসাহ

শাসন করা তারই সাজে, আদর করে যে। কিন্তু মাঝে মাঝেই শিশুদের সাথে বড়রা মানে আপনারা গুরুজনেরা এমন সব আচরণ করে ফেলেন যা একজন শিশুকে মানসিকভাবে ভেঙে দিতে পারে।

অসাবধানতায় বকা দিতে গিয়ে এমন সব বাক্য ব্যবহার করছেন যা হয়তো আপনার অজানাতেই একটি শিশুকে কষ্ট দিচ্ছে, প্রভাবিত করছে এবং পেছনে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন, আপনার এই শিশুই যদি আপনার কথায় প্রভাবিত হয়ে ঝরে পড়ে, ভেঙে পড়ে তাহলে পরবর্তীতে কী ঘটবে?

বর্তমানে একজন দুর্বল(!) শিশুকে অন্য আরেকটি শিশুর সঙ্গে তুলনা করা যেন আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

এর একটি প্রমাণ যে কোনো স্কুলের পরীক্ষার খাতা দেওয়ার পর বোঝা যায়। শিশুরা দুই নম্বরের জন্য ভালো না করলেও তাদের শুনতে হয় নানা কথা। কিন্তু একটু ভেবে দেখুন তো, সবার মেধা কী সবদিক দিয়ে একরকম হতে পারে? অনেকেই ভুলে যান যে কখনই দুটি শিশু একইরকম হতে পারে না। প্রত্যেক শিশুরই আলাদা আলাদা সত্ত্বা, প্রতিভা, ইচ্ছা ও নিজেকে বিকশিত করার ক্ষমতা রয়েছে।

আপনাদের কাছে আমার একটা অনুরোধ, একটি শিশুকে অপর শিশুর সাথে তুলনা করবেন না। এর প্রভাব হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে বোঝা যায় না, তবে এটার প্রভাব ভয়াবহ। আপনার এই তুলনার ফলে আপনার শিশুর সাথে তার বন্ধুর সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে, তার মধ্যে এই মনোভাব জাগ্রত হতে পারে যে ‘ও তো আমার থেকে বেশি পারে,’ ‘ও তো আমার থেকে ভালো।’ এ মনোভাবের ফলে শিশুরা তার নিজের মেধা খাটানোর, নিজ থেকে কিছু করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

তাই আপনাদের বলি কী, আপনার শিশুর আগ্রহ যে বিষয়ের প্রতি, শিশুকে সেটা করতে দিন, সেটা শিখতে দিন। শিশুর আগ্রহ যদি ছবি আঁকায় হয়, তাহলে শিশুকে ছবি আঁকা শেখান, তাকে জোর করে অন্য কিছু করাবেন না। কারণ কাজের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে, সেই কাজ কখনই সুন্দর হয় না।

আর সমাজের অন্যদের কথা না ভেবে, আপনার শিশুর দিকে তাকান। আপনি যখন একটি শিশুকে আইডিয়াল বা আদর্শ শিশু মনে করে, আরেকটি শিশুর সাথে তুলনা করবেন, তখন ওই শিশুটি প্রতারিত হতে পারে। তাই শিশুকে কাজ করার উৎসাহ দিন। দেখবেন আপনাদের এই উৎসাহ শিশুকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সত্যি কথা বলতে কী, এতোগুলো কথা আমি আমার নিজ অভিজ্ঞতা থেকে বললাম। আমি সবসময়ই স্কুল থেকে সব জায়গায়ই সাধারণ মানের ছাত্রী ছিলাম। খুব খারাপও না, আবার খুব ভালোও না। কিন্তু আমি খুব ভাগ্যবতী ছিলাম যে, আমার মা-বাবা আমাকে অন্য কারও সাথে তুলনা করেন না। কিন্তু আমাদের সমাজে কিছু শিক্ষিত মানুষ রয়েছেন, যারা কিনা শিক্ষিত হয়েও অশিক্ষিতদের মতো আচরণ করেন। সমাজের এসব মানুষগুলোর জন্যই এই ছোট শিশুগুলি তাদের মেধা, চিন্তাশক্তিকে হারিয়ে ফেলছে। তাদের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে এবং তারা মুক্তচিন্তার মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারছে না। 

আমার মা-বাবার সবসময়ই একটা শর্ত ছিল, ‘আমরা তোমার জন্য কষ্ট করছি, তাই তোমারও আমাদের জন্য তোমার পুরোটুকু ‍দিতে হবে।’ আজ বাবা-মার উৎসাহে এখনো একজন মুক্তমনের মানুষ ‍হিসেবে, নিজের মেধা, বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগাতে পারছি।

যারা আপনারা মনে করেন যে, পরীক্ষায় শিশুরা ভালো না করলেই সেই শিশুর কোন কিছু করার যোগ্যতা নাই, দয়া করে এই ধারণাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। আপনার শিশুর মধ্যেও হয়তো লুকিয়ে আছে এমন কোন সম্ভাবনা বা শক্তি, যা আপনার শিশুকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। শুধু এই শক্তিকে, এই সম্ভাবনাকে বাস্তব জীবনে কাজে লাগানোর জন্য দরকার আপনাদের উৎসাহ, অনুপ্রেরণা।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com