কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি এমন অনেক মানুষ আছে যাদের প্রত্যেকটা দিন এক একটা সংগ্রামের দিন। তাদের কোনো ছুটির দিন থাকে না, থাকলেও ছুটির দিন উপভোগ করার সাধ্য নেই তাদের। তাদের দিনগুলো স্বস্তির দিন নয় বরং আপনার আমার অস্বস্তিতম দিনগুলোর চেয়েও অস্বস্তিকর।
ছুটির দিনে পটুয়াখালীর কজন শিশু সাংবাদিক মিলে গিয়েছিলাম বেদে পাড়ায়।
লাউকাঠি নদীর উপরে পটুয়াখালী ব্রিজের নিচে তাদের বসবাস। সকাল বেলা পৌঁছলাম ওখানে। মানবেতর জীবন বুঝি, মানবেতরতম জীবন বুঝি একেই বলে।
এখানে প্রায় ৫০টি পলিথিনের বেড়া দেওয়া ঝুপড়ি রয়েছে, খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারীর সংখ্যাও কম নয়। প্রায় তিনশ লোকের বসবাস এখানে, শিশুর সংখ্যা একশ এর বেশি। কোনো শিশুই পাচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা।
দুবেলা দুমুঠো ভাত খাওয়াই যেখানে দায় সেখানে শিক্ষা বিলাসিতা।
এক শিশুর সঙ্গে কথা হলো। ও বলল, "মু ইচকুলে যাইচলাম আব্বায় মাইরছে। হেইনদে কামে লইগেছে, মু ইচকুলে যাউম আব্বারে হুনিদেন আম্মেরা।”
কাজ বলতে পুরুষরা গ্রামে গিয়ে সাপ, বানরের খেলা দেখায়। তবে আজকাল কেউ আর এসব দেখে পয়সা দেয় না। আর নারীরা গ্রামে গ্রামে মহিলাদের সর্বরোগ নিরোধ ঔষধ বিক্রি করে। তাদের এই কাজটা এখনো টিকে আছে, কারণ গ্রামের অনেক নারীই চিকিৎসা খুউব বিশ্বাস করেন। তবে তা দিয়েও স্বামী শিশুদের নিয়ে একবেলাই পেটপুরে খেতে পারেন না তারা।
এতো কষ্ট তাহলে পুরুষরা সাধারণ দিনমজুরদের মতো কাজ করছে না কেনো? এই প্রশ্ন আপনাদের মনেই শুধু আসেনি, আমাদের মনেও এসেছিল। তাইতো জানতে চাইলাম কেনো তারা এ কাজ ছেড়ে অন্য কোনো কাজ করছে না। তাদের উত্তর বিশদ, তবে তার মূলকথা হচ্ছে তারা তাদের সমাজে বৈষম্যের স্বীকার।
ঢাকা গিয়ে কোনো কাজ করার কথা বললে তারা যেনো আকাশ থেকে পড়লো। ঢাকা তো বিরাট ব্যাপার। বড়লোকদের শহর। ওখানে কি কাজ পাবে তারা?
তার থেকে যেন এই আধপেটা জীবন অনেক ভালো। এটা আমাকে অবাক করেনি। যারা জীবনের প্রতিটি পদে পদে বৈষম্যের স্বীকার তাদের কাছে ঢাকার মতো বড় শহর সম্পর্কে এমন ধারণা থাকাই স্বাভাবিক।
তাই চাই এই মানুষগুলোর একটা ব্যবস্থা হোক। কত প্রকল্পই তো আপনারা হাতে নিচ্ছেন। এই মানুষগুলোর জীবন বাঁচাও প্রকল্প হাতে নিতে পারেন না? জয় হতে পারে না মানবতার?