মধ্যবিত্ত একটি পরিবারে তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। পরিবারটি বেশ সুখেই চলছিল। কিন্তু তা বেশিদিন টেকেনি। হঠাৎ করেই তার মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাস খানেকের মাথায় চলে যান না ফেরার দেশে।
মেয়েটি তখন ১২ বছরের কিশোরী। বড় মেয়ে হওয়ায় বাকি দুই বোনকেও দেখভাল করতে হতো তাকে। সামলাতে হতো সংসারের কাজকর্মও। তিন মেয়ের কথা মাথায় রেখে বিয়ে করেন তার বাবা। সুখের বদলে শুরু হয় অশান্তি। এ থেকে মুক্তি পেতে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে এবার কুসুমের জন্য বিয়ে ঠিক করে ফেলেন তার বাবা। নিজ গ্রামে ভালো একটি পরিবারে মেয়েকে সপে দেন। আশা পূর্ণ হয় তাদের।
স্বামীকে নিয়ে সুখে দিন কাটছিল মেয়েটির। ঘর আলো করে আসি আমি। কিছুদিন পরই নানু মারা যান। এরমধ্যেই আমার বোন আসে। সবকিছু নিয়ে ভালোই চলছিল। হঠাৎ আমার বাবা অসুস্থ হয়ে যান। কাজ কর্ম করতে অক্ষম হয়ে পড়েন। সংসারে নেমে আসে অন্ধকার।
এরই মধ্যে আমার মেজ খালার বিয়ে ওয়ে যায়। সৎ মায়ের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাড় থেকে পালিয়ে যায় আমার ছোট খালা। এসব আমার মাকে আরও মানসিকভাবে অস্থির করে তোলে।
এদিকে বাবা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান, কখনো শুরু করেন মারামারি ও ভাংচুর।
আমাদের সংসার যেন আর চলছিলই না। একবেলা চুলোয় আগুন জ্বললে পরের বেলা জ্বলে না। আমাদের কথা চিন্তা করে মা অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ নেন।
গ্রামে কাজ করে পরিবারের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়ে আমাদের গ্রামে রেখেই ঢাকায় পারি জমান মা। অল্প বেতনে চাকরি হয় একটি পোশাক তৈরির কারখানায়।
এদিকে চিকিৎসার অভাবে বাবার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। মারা যান বাবাও। শোকে স্তব্ধ মা আরো ভেঙে পড়েন।
সবকিছু বুকে চেপে জীবনের চাকা সচল রাখতে আবারো ফিরে যান ঢাকায়।
ঢাকায় চাকরি করে আমাদের দুই ভাইবোনকে পড়ালেখা করান তিনি।
এই নারী আমার মা। আমি গর্বিত আমার মাকে নিয়ে। আমার মা একজন লড়াকু সৈনিক।