দিশাহারা তারুণ্য

আমি কলেজে পড়ছি। এই সেদিন, আমার ছেলেবেলাতেও পাড়া-মহল্লায় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, ক্লাবের ছড়াছড়ি ছিল। ছেলেমেয়েরা পড়ালেখার ফাঁকে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখত।
দিশাহারা তারুণ্য

তারা দলবেঁধে বিকেল বেলা মাঠে ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন  কিংবা ভলিবল খেলত। বার্ষিক নাটক মঞ্চস্থ করত। তাতে তারা নিজেরাই অভিনয় করত। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকত বছরজুড়ে। সাহিত্য প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মুক্তচিন্তার চর্চা চালাত। এর পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে তারা সব সময়েই সক্রিয়ভাবে অংশ নিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা শীতার্ত অসহায় মানুষের পাশে গিয়েও দাঁড়াত তারা।

তবে এখনকার কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা তাদের পড়াশোনা আর ভবিষ্যৎ গড়ার কাজে এতটাই ব্যস্ত এবং বিভোর থাকে যে তাদের আশপাশে তাকানোর ফুরসত নাই।

এরপরেও তারা যতটুকু অবসর পায় তা কাটায় ফেইসবুক, টুইটার কিংবা মোবাইল ফোনে বন্ধুদের সঙ্গে দীর্ঘসময় আড্ডা দিয়ে। বর্তমানে আত্মকেন্দ্রিকতা বা বলা যায়, আত্মমগ্নতা তাদের গ্রাস করেছে। নিজেকে নিয়েই তারা ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করে বেশি। চারদিকে স্বার্থপর, মতলববাজ ও ধান্ধাবাজ মানুষের কর্মকাণ্ড দেখতে দেখতে আমরা এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে এখন যদি কেউ সত্যি সত্যি ভালো কিছু করতে,  নিঃস্বার্থভাবে সততার সঙ্গে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে আসে তাহলেও তাকে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। তার কর্মকাণ্ডকে বাঁকা চোখে দেখতে চায় সবাই এবং সহজে মেনে নিতে চায় না।

সময়ের অনেকটা বিপরীতে দাঁড়িয়ে বর্তমান সমাজের এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী সমাজের কল্যাণ চিন্তায় ব্রতী হয়ে উঠছে। কিন্তু নানা কারণে তাদের অনেকেই হতাশ, বিরক্ত ও বিফল হয়ে সে পথ থেকে সরে আসছে। নিজেকে আবার খোলসের মধ্যে বন্দি করে ফেলছে। আজকের তরুণ প্রজন্ম যদি আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব ত্যাগ করে নিঃস্বার্থভাবে সমাজের জন্য কিছু করতে আগ্রহী না হয় তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম অনুসরণ করার জন্য কাউকে পাবে না। সে সংকটে আমরাও ভুগছি।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com