দিনটাকে মনে হয় যেন ঈদ। সবার বাড়ি বাড়ি ভালো ভালো রান্না হয়। মোড়ে মোড়ে বসে মাংসের দোকান। এই দিনে সবার বাড়িতে আসে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু।
মাহফিলের পাশেই ছোট একটা মেলাও বসে। মেলায় এলাকার লোক ছাড়াও অন্য গ্রাম থেকে মানুষ আসে। কী উৎসব উৎসব ভাব!
বিভিন্ন রকমের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা। এই দিনে সবাই একসঙ্গে মেলায় যায়। অনেক রাত পর্যন্ত চলে মেলা।
সেদিন আমিও রাত ৯টা পর্যন্ত মেলায় ছিলাম। মেলা থেকে ফিরে পাশের বাড়িতে থাকা বন্ধুর বাসায় যাই একটা বই দিতে।
তখন দেখি বকচরা বাইপাস রোডে কেমন যেন হট্টগোল, আমি সেখানে যাই নাই। পরে আমার আব্বু বাড়ি এসে বলে বাইপাস রোডে একজনকে মারা হয়েছে। বেচারা বাঁচবে না হয়তো। এক্ষুণি মারা যাবে।
পরে জানা গেল, পাশের গ্রাম কামালনগর থেকে তিন বন্ধু এসেছিল মেলায়। সাকিব, অমি ও রাশেদ। তুচ্ছ ঘটনায় মেলায় বখাটেদের সাথে কথা কাটাকটি হয়। বাড়ি ফেরার পথে বাইপাস সড়কের মোড়ে পৌঁছালে বখাটেরা সাকিব, অমি ও রাশেদ উপর হামলা করে। অমি ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। রাশেদ গুরুতর আহত হয়। সাকিব তাদের পিটুনিতে মারা যায়।
সাকিব, অমি ও রাশেদ আমাদের স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন, মিছিল হয়েছে।
সাকিব ভাইকে সেদিন সন্ধ্যায় আমি আমার বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে দেখেছিলাম।
এখন স্কুলে গিয়ে দশম শ্রেণির দিকে চোখ পড়লেই বুকটা কেঁপে ওঠে। মনে হয় এই মেলা আসবে, এই মাহফিল আসবে কিন্তু সাকিব ভাইয়া আর আসবে না। কী নিষ্ঠুর জীবন! কী মর্মান্তিক!