এখানে আমাদের দোষ কোথায়? আমরা কি জানতাম এমন হবে?
এরচেয়ে বেশি কষ্ট হতো, যখন আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা নিজেরা বলাবলি করতেন, ‘এরা সব ফাঁসপ্রশ্ন পড়ে এসেছে’; এমনকি পাশে দাঁড়িয়ে খাতা দেখে বলতেন, ‘প্রশ্ন পেয়েছিলে নাকি? এক নাগাড়ে লিখে যাচ্ছ!’
চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করেছিল, না, স্যার, প্রশ্ন পাই নি স্যার!
কিন্তু শিক্ষকের মুখের ওপর এভাবে বলা যায় না। কিন্তু খুব খারাপ লেগেছিল।
বলতে ইচ্ছা হতো, আমরা কী করেছি? সবাই আমাদের দিকে কেনো আঙুল তোলে? আরে আমরা কাঠপুতলি মাত্র। আমাদের নিয়ে যা করা হয় আমরা তাইই করি।
বেঁধে দেওয়া সময়ে আমরাই প্রথমে ছয়টা পরে সাতটা সৃজনশীল উত্তর লিখি। কিছু অসৎ মানুষের কার্যকলাপের ফলভোগ করি আমরাই। আমাদের পরীক্ষা বাতিল হতে পারে এই সংকট মাথায় নিয়েই পরীক্ষার আগে রাতেও টেনশন নিয়েই পড়ি, অনিদ্রায় জাগি আর অনিশ্চয়তা মাথায় করে পরীক্ষার হলে যাই।
এ এক অসম ও অসুস্থ প্রতিযোগিতার পরীক্ষা! তবু পরীক্ষা শেষে যদি বলি পরীক্ষা ভালো হয়েছে, তার মানেই যেনো ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছি!
তার পরেও আমাদের নিয়েই হাসাহাসি হচ্ছে, আমরা নাকি প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিচ্ছি।
যে দেশে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা যায় না সে দেশেই পরীক্ষার হলে ঢুকতে হয় শুধু কলম, পেন্সিল প্রবেশ পত্র আর রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে। অন্য কিছু নিলে নাকি শিক্ষার্থীরা নকল করার সুযোগ পাবে।
যেখানে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন পেয়ে হলে ঢোকে শিক্ষার্থীরা সেখানে এসব সতর্কতা মূল্যহীন মনে হয়।
আমার সেই বারোটি বছর, আমার পেছনে দেয়া আমার মায়ের সেই সময়, বাবার টাকা, তার কী কোন মূল্য নেই?
বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পরীক্ষার দিনে একটা ঘটনা ঘটে আমার সাথে। হলে আসতে দেরি হয়ে যায়। ঢোকার সময় একজন পুলিশ আমাকে কটাক্ষ করে বলেন, "প্রশ্ন পেয়েছে তো তাই একটু দেরি হয়ে গেছে?" কিছু বলার ছিল না শুধু পেছন ফিরে দেখলাম।
ফাঁস হওয়া প্রশ্ন আমাদের মত মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েদের জন্য না। আমার বাবার এত টাকা নাই যে আমাকে প্রশ্ন কিনে দেবেন। আর তার দরকারও নাই। ফাঁস প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে চাইনি।
ইউনিভার্সিটিতেও হয়তো জায়গা হবে না আমার জন্য। শুনেছি, সেখানেও ভর্তির রাস্তাটি খুব সরল নয়। হতাশ লাগে। তাই ওপরের কথাগুলি কোনো অভিযোগ নয়। হ্যালোর পাতায় নিজের সাথে নিজের দুঃখের কথা বলা।