আমি ছোট থেকে নিজের চেষ্টাতেই পড়ালেখা করে আসছি। আমার পরিবারের কেউ শিক্ষিত না হওয়ায় নিজের পড়াশোনার দেখভাল নিজেকেই করতে হয়েছে।
তবে আমার পাশে ছিলেন আমাদের স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক। এজন্যই সাহস পেয়েছি এতদূর আসার।
যাই হোক পরীক্ষার দিনের কথায় আসি। প্রথম দিন আমি আর আমার বন্ধু হৃদয় আধঘণ্টা আগেই পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হই।
প্রথমেই দেখা হলো বান্ধবী শম্পার সঙ্গে। ও জেএসসি পরীক্ষায় আমার সামনের বেঞ্চে বসেছিল। কেমন আছিস জিজ্ঞেস করতেই শুকনো হাসি দিল। বলল, “ভালো আছি। আজ আমার বৌভাত।”
খুব অবাক হলাম। বললাম বিয়েতে কেন রাজি হলি এত কম বয়সে। তাছাড়া এই পরীক্ষার মধ্যে। একটু হেসে জানালো, ওর বর বিদেশ চলে যাবে। তাই একটু তাড়াহুড়ো।
কথা শুনে ওর মা, বাবার প্রতি খুব রাগ হলো। আমাদের দেশ কবে পাল্টাবে ভাবতে ভাবতে নিজের বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। প্রথম পরীক্ষা ছিল বাংলা। খুব ভালো হয় পরীক্ষাটা।
প্রথম দিন ভালো পরীক্ষা দিতে পেরে নিজের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায় কিন্তু সেই আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে দ্বিতীয় পরীক্ষায় ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র।
দ্বিতীয় পরীক্ষার দিন পরীক্ষা কেন্দ্রে পা রেখেই দেখি মাঠে কয়েকজন মিলে গোল হয়ে মোবাইল টিপছে। এরপর বুঝতে বাকি রইল না ওরা কি করছে। তারপরেই ঘণ্টা পড়ল, পরীক্ষার হলে ঢুকে গেলাম।
যথারীতি নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্ন আসল। আমার হলের অনেকেই পাঁচ মিনিটে সব প্রশ্নের উত্তর শেষ করে ফেলে। আমার প্রায় ৩০ মিনিট লাগল উত্তর শেষ করতে। অনেকটা হতাশ হলাম, ভাবলাম ওরা মনে হয় ৩০ এ ৩০ ই পাবে!
মনে মনে বললাম, নিজের বুদ্ধিতে ফকির হওয়া ভালো, অন্যের বুদ্ধিতে বাদশা হওয়াও ভালো না।
পরের দিন জানতে পারলাম যারা প্রশ্ন পেয়েছিল তাদের বেশির ভাগই উত্তর ভুল করেছে। তারা অনেকে কান্নাও করেছে।
প্রশ্ন পেয়েও সেটা দেখিনি বলে অনেকে মজাও করেছে আমাকে নিয়ে। যাহোক সৎ থেকেছি, এটাই বড় কথা।
সবচেয়ে খারাপ লেগেছে ভালো শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের পেছনে ছুটতে দেখে। তারাই যখন প্রশ্নের পেছনে ছোটে তখন মনটা খারাপ হয়ে যায়।
প্রশ্ন যদি ফাঁসই হয় তাহলে ঐ পরীক্ষার কোনো মূল্য থাকে কি?
এসব করে ভালো ফল হয়তো করা যায় কিন্তু প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করা যায় না।