সাংবাদিক থেকে লেখক

লেখালেখির অভ্যাস গড়ে উঠেছে সাংবাদিকতা থেকেই। সেই অভ্যাসই আমাকে কাজের ক্ষেত্রে আরেকটি অধ্যায় যোগ করার সুযোগ করে দিয়েছে আর সেটি হল বই লেখা।
সাংবাদিক থেকে লেখক

এ বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আমার লেখা প্রথম বই ‘অটিস্টিক শিশুরা কেমন হয়’ প্রকাশিত হয়েছে।

মূলত দুই বছরের ডায়েরিকে কেন্দ্র করে একটি ছোট গবেষণার মাধ্যমে বইটি লিখেছি। বইয়ের প্রচ্ছদটিও আমি করেছি।

অটিজমের সংজ্ঞা,প্রকারভেদ, কারণ, লক্ষণ, বিকাশ, বৈশিষ্ট্য, চিকিৎসা, করণীয় এবং অটিস্টিক শিশুর বেড়ে ওঠা, আচরণ, প্রশিক্ষণ, শিক্ষা, সচেতনতা, সামাজিক প্রেক্ষাপট ও প্রতিবন্ধকতাসহ ইত্যাদি বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে এই বইটিতে।

তথ্যসূত্র উল্লেখসহ এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রমাণিত তথ্য আছে।

পরিশেষে বইটিতে উল্লেখ আছে প্রধানমন্ত্রী এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত মাননীয় মন্ত্রী, বিশিষ্ট জনের মতামত ও বিভিন্ন পেশার মানুষের অটিস্টিক শিশু সম্পর্কিত মতামত।  

বই লেখার শুরুর গল্পটি অনেকের থেকেই ভিন্ন। বই লিখব সেটি আগে চিন্তা করিনি তাই প্রকাশনার সাথে যুক্ত মানুষদেরও তেমন চিনতাম না।

একদিন অন্বেষা প্রকাশন হ্যালোতে প্রকাশিত লেখাগুলো দেখে আমাকে ডাকলেন। আমার অটিজম বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেখে এই বিষয়টি নিয়ে লেখার প্রস্তাব পাই।

তখন মনে হল এই বিষয়টি নিয়ে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই আমি লিখতে পারব। কারণ আমার ভাই জীম একজন অটিস্টিক শিশু।

চিকিৎসার প্রয়োজনেই ছোটবেলা থেকে জীমের প্রতিদিনের কার্যক্রম একটি নির্দিষ্ট ডায়েরিরে লিখতে হতো আমাকেই। কারণ আম্মু অফিসের পরে ডায়েরি লিখতে বসলে ভাইকে সময় দিতে পারতেন না। মা মুখে বলতেন আর আমি লিখতাম। একটু বড় হওয়ার পরে আমি আম্মুর সাহায্য ছাড়াই জীমের প্রতিদিনের কাজ লিপিবদ্ধ করা শিখে ফেলি।

পুরোপুরি জীমকে নিয়ে লেখার অভ্যাস গড়ে উঠেছিল এসএসসি পরীক্ষার পর থেকে। লেখার সময় প্রায়ই মাথায় আসতো যে জীম এমন কেন করে, তেমন কেন করে? মাঝেমধ্যে গুগলে সার্চ দিয়ে দেখতাম। কিন্তু বই আকারে প্রকাশের কথা চিন্তা সেই ছোট বয়সে কল্পনায়ও ভাবিনি। সেই ডায়েরির লেখাগুলো অনেক কাজে এসেছে।

আমার বইটি লেখা অটিস্টিক শিশুদের নিয়েই। ক্ষুদ্র জ্ঞান ও দুই বছরের রিসার্চ থেকে বলতে পারি  অটিজম কোনো রোগ নয়।

অটিজম শব্দটি ছোট হলেও এর গভীরতা ব্যাপক। অটিজম হলো স্নায়ুসংক্রান্ত একাধিক বিকাশজনিত জটিলতা যা মূলত শিশুটি জন্মের ১৮ মাস থেকে তিন বছরের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়।

অটিস্টিক শিশুরা প্রতিবন্ধী নয়। অটিস্টিক শিশুদের মস্তিষ্ক স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় অনেক ধীরে বিকাশ লাভ করে। যার ফলে তাদের বয়স বাড়লেও আচরণ হয় ছোট শিশুদের মতোই।

তাদের আচরণের ভিন্নতার কারণে অধিকাংশ মানুষই তাদের আলাদা চোখে দেখে। আমাদের এই মানসিকতা এ রকম শিশুদের বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাদের অনেককেই দেখে বুঝতে পারা সম্ভব নয়। অন্য শিশুদের মতো তাদের চেহারাও স্বাভাবিক। শুধু ভিন্নতা সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় ও আচরণে।  

সমাজের সব স্তরের মানুষের সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের উপযুক্ত পরিবেশ নিশিচত করা কঠিন কিছু না। সব পেশার মানুষ তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে যতটুকু পারে ততটুকু করার চেষ্টা করলেই তাদের সুষ্ঠু বিকাশের মাধ্যম ও পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব।

তাদের জন্মের পরবর্তী সময়ে তাদের আচরণ অন্য শিশুদের মতোই থাকে। তারা কথা বলে, ডাকলে সারা দেয়, খেলাধুলা করে। তবে নিখুঁতভাবে লক্ষ্য করলে ভিন্নতা ধরতে পারা সম্ভব। শুরু থেকেই পর্যবেক্ষণ করলে তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তোলা সম্ভব। সঠিক প্রশিক্ষণ ও যত্ন তাদের দ্রুতই অন্য স্বাভাবিক শিশুদের মতোই জীবন-যাপন করতে মুখ্য ভুমিকা পালন করবে।  

বইটি লেখার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন আমার মা এবং লিখেছি আমার ভাইয়ের জন্যই। আমি আশাবাদী জীমের মতো সব অটিস্টিক শিশুরা একদিন অটিজমকে জয় করবে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com