তবে হাল ছাড়িনি। একটি ক্যাডেট কোচিং-এ ভর্তি হলাম। বাসা থেকে বলা হলো ক্যাডেটে সুযোগ পাই বা না পাই, কিছু যেনো শিখতে পারি।
সেবছর কী শিখলাম নিজেও জানি না। ক্যাডেটে তো সুযোগ পেলাম না কিন্তু কোচিং করার সুবাদে ময়মনসিংহে আত্মীয়ের বাড়ি বেড়ানো হলো।
তারপর ক্লাস সেভেন শেরপুরের নবারুন পাবলিক স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেলাম। যথারীরি ক্লাস শুরু হলো কিন্তু আমার ভালো লাগত না।
জেলা স্কুলের ছাত্ররা যখন তাদের কোনো ইভেন্টে শহরে আসত, আমার খুব ইচ্ছা করত ওদের সাথে যেতে। অংশ নিতে। কিন্তু সেটা তখন সম্ভব ছিলো না। কারণ প্রাইভেট স্কুলগুলি সেখানে অংশ নিতে পারত না।
ক্লাস করতে থাকলাম আমার স্কুলেই। একজন ভালো বন্ধুও হলো। তারও আমার মতোই অবস্থা। আমরা দুজনেই ভাবতাম, জেলা স্কুল মানেই খুব মজা।
ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা এলাকার কজন বন্ধু মিলে মাঠে গিয়ে দেখি, জেলা স্কুলের ছেলেরা খেলছে। আমারও খুব ইচ্ছা করল মাঠে নেমে যাই। ওদের সাথে খেলি। কিন্তু উপায় নাই!
কারণ স্কুলে না গিয়ে খেলতে শুরু করলে বাড়িতে জানানো হবে। আর আমি চাই না যে সেটা হোক। কারণ বিশেষ কারণে আমার ওপর বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হতো। কেনো সেটা করা হতো তা আমি বলতে চাই না।
এভাবেই ক্লাস সেভেনে বার্ষিক পরীক্ষার সময় এসে গেলো। এবার কোমর বেঁধে নামলাম। আমার বন্ধু আর আমি মিলে ঠিক করলাম, এবার জেলা স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না। তাতে করে আমাদের এই বার্ষিক যেমনই হোক কিছুই যাবে আসবে না।
দুবন্ধু মিলেই জেলা স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। জানতাম সুযোগ পাব না। পরীক্ষার ফল বের হবে যেদিন সেদিন সকালেই আমার ঢাকা যাওয়ার কথা। জানি সুযোগ হবে না তাই সেটা নিয়ে মাথা ঘামাইনি। ঢাকার বাস ছাড়বে সকাল ১১ টায়। ভর্তি পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে তার এক ঘণ্টা আগেই। সাড়ে দশটার দিকে বন্ধুর ফোন পেলাম।
যা শুনলাম, বিশ্বাস হতে চায় না। বন্ধু জানালো, আমি জেলা স্কুলে চান্স পেয়েছি! বন্ধুও চান্স পেয়েছে। দৌড়ে চলে গেলাম আমার স্বপ্নের স্কুল, জেলা স্কুলে। সেলফি তুলে আনন্দ করে দুপুর ১২টার গাড়িতে ঢাকা চলে গেলাম বেড়াতে।
এখন ফেব্রুয়ারি মাস। আর আমি জেলা স্কুলের গর্বিত ছাত্র। এসএসসির বন্ধ পুরো এক মাস।
আমি এখন মাঠে খেলতে যাই আর দেখি আমার পুরনো স্কুলের বন্ধুরা ব্যাগ কাঁধে স্কুলে যাচ্ছে। মনটা খারাপ হয়ে যায়। একদিন আমিও ছিলাম ওই দলে!